জেনে নিন জলাতঙ্ক প্রতিরোধের উপায়
জলাতঙ্ক হচ্ছে ভাইরাসজনিত এক ধরনের জুনোটিক রোগ। রেবিজ ভাইরাস নামক এক ধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাসে এ রোগ হয়। এ রোগ সাধারণত গৃহপালিত প্রাণি ও বন্যপ্রাণিকে প্রথমে সংক্রমিত করে। মানুষ এ প্রাণিগুলোর বা এদের লালার সংস্পর্শে এলে বা এই প্রাণিগুলো যদি মানুষকে কামড়ায় অথবা আচড় দেয় তাহলে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়ায়।
প্রতিরোধ
এ রোগ প্রতিরোধের উপায় হলো টিকা নেওয়া। এই ভাইরাসের অনেকরকম টিকা আবিষ্কার হয়েছে। তবে সবচেয়ে নিরাপদ টিকা হলো হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন (এইচডিসিভি)। অন্যান্য টিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পিউরিফাইড চিক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন, ডাক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন, নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন ইত্যাদি। ডাক সেল ভ্যাকসিনের ইমিউনোজেনেসিটি বা কার্যকারিতা কম এবং নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন অ্যালার্জিক এনসেফালোমায়েলাইটিস করতে পারে। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগে টিকা নেওয়াকে প্রি-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস ও আক্রান্ত হওয়ার পরে টিকা নেওয়াকে পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস বলে।
আক্রান্ত হওয়ার আগে
পশুচিকিৎসক, চিড়িয়াখানার প্রাণি দেখাশোনাকারী, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লোকজন বা ওই এলাকায় ভ্রমণকারী ব্যক্তি ও যারা বাড়িতে কুকুর পোষেন, তাদেরকে প্রতিরোধমূলক টিকা দেওয়া হয়। সাধারণত তিনটি ডোজ ০, ৭ ও ২১ বা ২৮তম দিনে এবং প্রতিবছর বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়।
অাক্রান্ত হওয়ার পরে
রেবিজ ভাইরাসের সুপ্তাবস্থা অনেক বেশি হওয়ায় টিকা দেওয়ার পরে প্রতিরোধক ইমিউনিটি তৈরির জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে। তাই এই ভ্যাকসিন পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস হিসেবে নিয়মিত রুটিনমাফিক ব্যবহার করা হয়।
উপায়
১. সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার দশ দিনের মধ্যে দিলেও ক্ষত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. ক্ষতস্থানটি সাবান ও পানি দিয়ে কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধৌত করতে হবে। এরপর আয়োডিন দ্রবণ দিয়ে পুনরায় পরিষ্কার করতে হবে।
৩. টিটেনাস টিকাও দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে হবে।
৪. পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিসের মধ্যে টিকা ও হিউম্যান রেবিজ ইমিউনোগ্লোবিউলিন উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।
৫. হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিনের পাঁচটি ডোজ ০, ৩, ৭, ১৪ ও ২৮তম দিনে দেওয়া হয়। তবে ৯০তম দিনে আরেকটি বুস্টার ডোজ দেওয়া যেতে পারে।
৬. আরআইজি শুধু একবার প্রথমদিনে দেওয়া হয়। এটি মূলত ক্ষতস্থানে বেশি দিতে হয়, বাকি অংশটুকু মাংসপেশীতে দিতে হয়।
৭. টিকার মধ্যে নিষ্ক্রীয় রেবিজ ভাইরাস থাকে পক্ষান্তরে ইমিউনোগ্লোবিউলিন হলো অ্যান্টিবডি।
৮. এ দু’টি ইনজেকশন শরীরের দু’টি ভিন্ন জায়গায় পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রেখে দিতে হয়। না হলে আরআইজি মধ্যস্থিত অ্যান্টিবডি ভাইরাসটিকে অকেজো করে দিবে এবং টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে।
৯. যদি কামড় প্রদানকারী প্রাণিকে ধরে ফেলা যায় তাহলে ১০ দিন তাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যদি প্রাণিটির মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়, তাহলে তাকে মেরে ফেলা উচিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন