টকশোর বক্তাদেরই সব জ্ঞান, আমাদের মাথায় কিছুই নেই
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, রাতে টেলিভিশন যখন দেখি, টকশোতে অনেক রকমের কথা হয়। মনে হয়, যারা কথা বলছেন সমস্ত জ্ঞান তাদেরই। আমাদের মাথায় কিছুই নেই। প্রধান বিচারপতি বলেন, এত কথা বলে উসকানি দেওয়ার তো কোনো মানে হয় না। কোটার বিষয়বস্তুর ওপর স্থিতাবস্থা জারির আগে গতকাল সকালে উষ্মা প্রকাশ করে এসব কথা বলেন তিনি।
পরে কোটা বহাল করে হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্র পক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগ কোটার বিষয়ে সবপক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন। আদেশের আগে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা তো এই সমাজের মানুষ, কিছু কথা বলতে হয়। হাই কোর্টে একটা রায় হয়ে গেছে। আমাদের যে সব ছাত্রছাত্রীরা এই যে আন্দোলন করছে, তাদের মনে একটা বিবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তারা যেটা মনে করছে, তারা সেটাই করছে। তারা রাস্তায় নেমেছে। তারা যেটা করেছে তা সমর্থন করার মতো না। আমার মনে হয়, তারা ভুল বুঝেই এটা করছে। যাই হোক তারা (আন্দোলনকারীরা) তো আমাদেরই ছেলেমেয়ে। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি প্রথম দিনেই বলেছি রাস্তায় স্লোগান দিয়ে আদালতের (জাজমেন্ট চেঞ্জ) রায় পরিবর্তন করা যায় না। আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে থাকার সময়ই একই কথা বলেছিলাম। রায় পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন সঠিক পদ্ধতি না।
এটার একটা সঠিক পদ্ধতি আছে। সেজন্য আদালতে আসতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হককে ধন্যবাদ দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আজকে আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। তারা অন্তত পক্ষে একটি উদ্যোগ নিয়েছে। রাস্তায় যে ছেলেমেয়েরা আন্দোলন করছে, তাদের কিছু কথা তো আছে। এই কথাগুলো শুনবে কে, প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি বলেন, রাতে টেলিভিশন যখন দেখি, টকশোতে কত কথা, কত রকমের কথা।
মনে হয়, সমস্ত জ্ঞান তাদেরই, যারা কথা বলছেন। আর আমরা যারা এখানে বসে আছি আমাদের কোনো জ্ঞানই নাই, কারও মাথার মধ্যে কিছুই নাই। তিনি বলেন, এখন বিষয়টি সলভ করতে হবে। হাই কোর্ট বিভাগ একভাবে সলভ করেছে। এখন সেটা (রায়টি) সঠিক হয়েছে কি হয় নাই তা দেখার অধিকারটা কার? সেটা দেখার অধিকার সুপ্রিম কোর্টের। একমাত্র আপিল বিভাগের। আপিল বিভাগ ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব না। এই কথাটা এই বাচ্চাদের কেউ বলেন না কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যারা বড় বড় জায়গায় আছেন, ছেলেমেয়েগুলোকে বলেন- এটা তো পথ না, তোমরা কোর্টে যাও।
প্রধান বিচারপতি শুনানিতে বলেন, আমাদের ক্ষমতা আছে হাই কোর্টের রায়টি বাতিল করার বা না করার। আবার বলতে পারি হাই কোর্টের রায়টি ঠিক হয়নি বা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা কোনটা বলব? রায়টি আমাদের সামনে না আসা পর্যন্ত তো তা বলতে পারছি না। আমার মনে হয়, রায়টি আমাদের সামনে আসুক, রায়টি আসলে আমরা যথাযথ মূল্যায়ন করব। এ পর্যন্ত যা হয়েছে, এনাফ ইজ এনাফ, বলেন প্রধান বিচারপতি।
প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রধান বিচারপতি বলেন, স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকারীরা চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারবেন। আর আদালত মূল দরখাস্তটি নিষ্পত্তিকালে তাদের বক্তব্যটি বিবেচনায় নেবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন