টুপি, জায়নামাজ আর আতরের বাজারও বিদেশি পণ্যের দখলে
ঈদের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ভিড় বেড়েছে টুপি, জায়নামাজ ও আতর দোকানগুলোতে। দেশ-বিদেশের বাহারি টুপির পসরা নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। তবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, জামা-কাপড়ের মতো টুপির দোকানগুলোরও বেশিরভাগই দখল করে আছে বিদেশি পণ্য। পাশাপাশি জায়নামাজ এবং আতরের বাজারও রয়েছে বিদেশি পণ্যের দখলে। নতুন নতুন ডিজাইন আর কম দামের কারণে বিদেশি টুপির চাহিদা বেশি বলে অভিমত বিক্রেতাদের। এছাড়া ভালো মানের দেশি টুপি সবই রফতানি হয়ে যায় বলে বিদেশি পণ্যের প্রসার অব্যাহত আছে বলে মনে করেন তারা।
এ বছর দেশের বাজারে পাকিস্তান ও চীনে তৈরি টুপির চাহিদা বেড়েছে। রাজধানীর বায়তুল মোকররম মসজিদ মার্কেট, গুলিস্তান, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, কাঁটাবন মসজিদ মার্কেট, কাকরাইল মসজিদ মার্কেটসহ ফুটপাতের বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যাচ্ছে বিদেশি টুপি, জায়নামাজ ও আতর।
ডিজাইন, কাপড়ের বৈচিত্র ও কম দামের কারণে পাকিস্তান ও চীনের তৈরি টুপির চাহিদা বেশি। এছাড়া বিক্রির দিক দিয়ে বাংলাদেশ, তুরস্ক, ভারত, সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়া থেকে আসা টুপিও বেশি। ৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা দামের টুপি বিক্রি হচ্ছে ডিজাইন ভেদে।
পাকিস্তানের বুগিজ ও স্টোন টুপি চোখে পড়বে প্রতিটি দোকানে। এসব টুপি পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে। চীনা টুপির দাম ১৮০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। তুরস্ক থেকে আসা টুপি মিলছে ৩০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায়। সৌদি আরবের টুপি পাওয়া যায় ২০০ টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। বাংলাদেশে তৈরি টুপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের আল মোত্তাকিম হাউজের স্বত্ত্বাধিকারী মো. আলামিন বলেন, ‘মানুষ এখন নতুন নতুন ডিজাইনের টুপি পরতে চায়। মূলত এ কারণে চীনা ও পাকিস্তানি টুপির চাহিদা বেশি। এছাড়া তুর্কি টুপি, পাগড়ি টুপি, গোল টুপি, জালি টুপিও বিক্রি হচ্ছে বেশি।’
বিদেশি আতরের চাহিদা বেশি ক্রেতাদের মধ্যেকেন বিদেশি টুপি বেশি বিক্রি হয় এমন প্রশ্নের জবাবে ইসলাম টুপি হাউজের বিক্রয়কর্মী জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের এখানে পাকিস্তানের বুগিস, স্টোন টুপি, মালয়েশিয়ার বেলবেট মাহতির টুপি, ইন্ডিয়ান বুরি টুপির চাহিদা বেশি। বিদেশি টুপি প্রতি বছর নতুন নতুন ডিজাইনে আসে। ডিজাইনের ভিন্নতা যেমন আছে, তেমনি দাম খুব বেশি না। আর ভালো মানের দেশি টুপি তো সবই রফতানি হয়ে যায়,আমাদের লোকাল মার্কেটে সেসব পণ্য আসে না।’
শুধু টুপি নয়, জায়নামাজের বাজারও বিদেশি পণ্যের দখলে। নকশা ও কাপড়ের ধরন ভেদে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা দামের জায়নামাজ পাওয়া যায়। পাকিস্তান,তুরস্ক ও সৌদি আরবের জায়নামাজ বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন বিক্রেতারা। এছাড়া চীন, ভারত, বেলজিয়াম,সিরিয়ার তৈরি জায়নামাজ পাওয়া যায় বাজারে। জায়নামাজ সিঙ্গেল ও ডাবল এই দুই প্রকারের ভেদে দামের ভিন্নতা থাকে।
দেশি সুতি কাপড়ের জায়নামাজ ১০০ থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তুরস্কের আইডিন কোম্পানির জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৬ হাজার টাকায়। পাকিস্তানি জায়নামাজ ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা, ভারত ও বেলজিয়ামের তৈরি জায়নামাজ পাওয়া যায় ৫ হাজার টাকার মধ্যে। সিরিয়ার ভেলভেট কাপড়ের তৈরি জায়নামাজ ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের ইসলাম কালেকশন হাউজের বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নরম ও দেখতে সুন্দর জায়নামাজের প্রতি ক্রেতাদের চাহিদা বেশি। দেশি সুতির জায়নামাজের চাহিদাও আছে। তবে পাকিস্তান, তুরস্ক ও সৌদি আরবের মখমল ও ভেলভেট কাপড়ের তৈরি জায়নামাজ বেশি চলে।’
এদিকে ঈদ উপলক্ষে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সুবাসের আতর বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আতর যত পুরনো হয় দাম তত বেশি। দুবাই, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কম্বোডিয়া, ভারত, বুলগেরিয়া থেকে বেশি আতর আসে। এছাড়া দেশি আল মীম, সুলতান, কেপিপি, স্কয়ার, আলিফ নামের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশি আতরও বিক্রি হচ্ছে। আতর ছাড়াও বাহারি ডিজাইনের আতরের দানি (বোতল) পাওয়া যায়। কাচ ছাড়াও বিভিন্ন ধাতু মিশ্রণে তৈরি এসব আতরদানি বিক্রি হয় ৫০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা জানান, বিভিন্নভাবে প্রস্তত হয় আতর। এর মধ্যে রাসায়নিকভাবে তৈরি আতরের দাম তুলনামূলকভাবে কম।
১০০ মিলিলিটারের বোতলে ম্যাডার রোজ আতর ১ হাজার ৬০০ টাকা, লর্ড ১ হাজার টাকা, সিলভার ১ হাজার ৭০০ টাকা, ইগুবস দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কম্বোডিয়ান আগর আতর তোলাপ্রতি (এক তোলায় ১১.৬৬ গ্রাম) ৬৪ হাজার টাকা, ভারতের চন্দনকাঠের তৈরি আতর তোলাপ্রতি ৪ হাজার টাকা, গোলাপের আতর তোলাপ্রতি ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় আতর পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। সিলেটের আগর গাছ থেকে তৈরি আতর বিক্রি হয় তোলাপ্রতি ৩ থেকে ৭ হাজার টাকায়।
বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের খুশবু কালেকশনের বিক্রেতা জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আতরবেশি আমদানি করা হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে। স্টাইল উদ, হাটকরা উদ, হোয়াট উদ, আগর, আম্বার, দরবার, জান্নাতুল ফেরদৌস, রোজ আইটেমের চাহিদা বেশি। দুবাইয়ের হোয়াট উদ ৬ হাজার টাকা আর আগর বিক্রি হয় ৩২ হাজার টাকা তোলা। আতরের মান ও ধরন ভেদে দামের ভিন্নতা থাকে।’বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে প্রকাশিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন