ট্রাম্পকে এবার মিথ্যাবাদী বললেন ব্যক্তিগত আইনজীবী
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মিথ্যা বলেন, এ কোনো গোপন ব্যাপার নয়। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় থেকেই তাঁর মিথ্যার একটি ক্রমঃতালিকা রক্ষা করে চলেছে। গত ৪৯৭ দিনে এই মিথ্যা বা অর্ধসত্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৫১।
এত দিন ট্রাম্প ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ বা অন্যান্য পত্রপত্রিকা ও টিভি নেটওয়ার্ককে ‘ফেক নিউজ’ বলে খারিজ করে দিয়েছেন। কিন্তু এবার তাঁকে মিথ্যা বলার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন তাঁর একসময়ের অনুগত ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন। ট্রাম্পের ‘ফিক্সার’ নামে পরিচিত এই আইনজীবীর মুখ্য কাজ ছিল ট্রাম্পের সব নষ্টামি হয় লুকানোর অথবা ভয় দেখিয়ে মিটমাটের ব্যবস্থা করা। ট্রাম্পের দুই প্রেমিকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস ও ক্যারেন ম্যাকডুগালকে মোটা অর্থের বিনিময়ে মুখ বন্ধ রাখার ব্যবস্থা তিনিই করেছিলেন।
কোহেন এত দিন মুখ বন্ধ করে রেখেছিলেন। তিন মাস ধরে তাঁর ও ট্রাম্পের সম্পর্ক খতিয়ে দেখছেন রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের প্রশ্নে তদন্তরত বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার। এই তদন্ত করতে গিয়েই কোহেনের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালিয়ে এফবিআই বিস্তর ক্ষতিকর প্রামণপত্র জব্দ করেছে। এই জব্দ তালিকায় কোহেনের রেকর্ড করা ট্রাম্পের সঙ্গে কথোপকথনের বিপুলসংখ্যক রেকর্ডিং রয়েছে। এর একটি কোহেনের ব্যক্তিগত আইনজীবীর মাধ্যমে সিএনএনের হস্তগত হওয়ার পর তা ইতিমধ্যে প্রচার হয়েছে।
এতে দেখা যায়, প্লেবয় মডেল ম্যাকডুগালের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে, তাঁকে অর্থ দিয়ে মুখ বন্ধের ব্যবস্থা হচ্ছে, সেটিও তিনি জানতেন। ফলে এই সম্পর্ক অস্বীকার করে যে গল্পটি ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকেরা এত দিন বলে এসেছেন, সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
কোহেন এর চেয়েও বড় একটি মিথ্যার কথা প্রকাশ করেছেন, যা আইনিভাবে ট্রাম্পের জন্য অধিকতর বিপদ ডেকে আনতে পারে। সিএনএন জানিয়েছে, ২০১৬ সালের জুন মাসে ট্রাম্প টাওয়ারে ট্রাম্পের বড় ছেলে ট্রাম্প জুনিয়রের সঙ্গে ক্রেমলিনের সঙ্গে সম্পর্কিত একজন আইনজীবীর যে গোপন বৈঠক হয়, সে ব্যাপারে ট্রাম্প পুরোপুরি অবহিত ছিলেন, এমন দাবি করেছেন কোহেন। এই রুশ আইনজীবী জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে হিলারি ক্লিনটনের ব্যাপারে ক্ষতিকর প্রমাণপত্র রয়েছে। এই বৈঠকের সূত্র ধরে ম্যুলার রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের ক্যাম্পেইনের আঁতাতের বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
কোহেন দাবি করেছেন, এই বৈঠকের বিষয়ে ট্রাম্প জুনিয়র পিতার সঙ্গে কথা বলেছেন, আর সে কথার সময় তিনি নিজে উপস্থিত ছিলেন। কোহেন জানিয়েছেন, ট্রাম্প এই বৈঠক অনুমোদন করেন ও ট্রাম্প জুনিয়রকে তাতে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করেন।
এর আগে কংগ্রেসের সামনে এক শুনানিতে কোহেন অবশ্য এ ব্যাপারে ট্রাম্প আগেভাগে কিছু জানতেন, সে কথা অস্বীকার করেছিলেন। সে কথার সূত্র ধরে ট্রাম্পের বর্তমান আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি দাবি করেছেন, কোহেন একজন আস্ত মিথ্যাবাদী, তাঁর কথার কোনো দাম নেই। অন্যান্য অনেকে অবশ্য বলছেন, কোহেন যদি নিজের দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারেন, যেমন কোনো চিঠি বা ই-মেইল, তাহলে ট্রাম্প বিপদে পড়তে পারেন। কোহেন জানিয়েছেন, ট্রাম্প জুনিয়র যখন পিতাকে এ কথা জানান, তখন সেখানে আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ম্যুলার যদি তাঁদের সবাইকে তলব করেন, তাহলে তাঁর পক্ষে সত্য উদ্ধার কঠিন হবে না।
উল্লেখ্য যে, ট্রাম্প নিজে এই বৈঠকের ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানতেন না, এ কথা জোর গলায় বলেছেন। ক্যারেন ম্যাকডুগালের সঙ্গে তাঁর কোনো গোপন প্রণয় নেই, সে কথাও তিনি জোরেশোরে দাবি করেছেন। কিন্তু কোহেনের টেপটি ফাঁস হাওয়ার পর তাঁর ও ম্যাকডুগালের বিষয়টি সত্যি এবং তাঁকে অর্থের বিনিময়ে মুখ বন্ধ রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে, তা যে তিনি জানতেন, সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রুডি জুলিয়ানি নিজে সে কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর দাবি, এতে বে-আইনি কিছুই হয়নি। ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে অর্থের বিনিময়ে ক্ষতিকর এই তথ্য গোপন রাখার চেষ্টা নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন বলে প্রমাণিত হতে পারে। জুলিয়ানির দাবি, সে কথা সত্য নয়। কারণ তিনি নগদ নয়, চেকের বিনিময়ে হিসাব মেটাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘনের বিষয়টি ম্যুলারের বিবেচ্য, তবে কোহেনের ফাঁস করা টেপ থেকে আপাতত এ কথা প্রতিষ্ঠিত হয় যে এত দিন ‘পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস বা প্লেবয় মডেল ক্যারেন ম্যাকডুগালকে চিনি না, তাঁদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই’ বলে যে দাবি ট্রাম্প অহোরাত্র করে গেছেন, তা সর্বৈব মিথ্যা। এই গোপন প্রণয় ও তা লুকানোর জন্য অর্থ চালাচালির খবর বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হলে ট্রাম্প তাদের ‘ফেক নিউজ’ বলে বাতিল করে দিয়েছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে ‘ফেক নিউজ’ আসলে ততটা ‘ফেক’ নয়, যতটা ‘ফেক’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন