‘ট্রেন গেলে ব্রিজ কাঁপে, নাট-বল্টু নেই, বললেও কেউ শোনেনি’
‘ভাই এই ব্রিজ খুব দুর্বল, কতবার তারারে (রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ) কইছি পাত্তাই দেয় না। এখন দিয়ে ট্রেন জেবলা যায়, ব্রিজ ইকটায় কাঁপে’। সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে এমনটাই জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল রেলওয়ে স্টেশনের কাছে যে সেতুটি ভেঙে আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, সেই সেতুর দুরবস্থা নিয়ে অনেক আগে থেকেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন স্থানীয়রা।
কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের অভিযোগ আমলে নেয়নি।
অন্যদিকে শতবছরের পুরনো এই রেল পথটিতে মাঝে মধ্যে সংস্কার করা হলেও অধিকাংশ স্থানের অবস্থাই অত্যন্ত নাজুক। আর সেতুগুলোর কথাতো বর্ননা করার মতো না। নড়বড়ে এই রুটের প্রতিটি সেতুতে ট্রেন উঠলেই কাঁপতে শুরু করে।
সচেতন মহলের দাবি, শুধুমাত্র ঢাকা-সিলেট রেলপথে যে পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটে তা সম্পূর্ণ দেশের রেলপথেও ঘটে না। কখনো পাহাড়ি ঢলে রেল লাইনের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। আবার কখনো ব্রিজ ভেঙে যায়। তবে সবচেয়ে বেশি ঘটে লাইনচ্যুতের ঘটনা।
জানা যায়, ১৭৬ কিলোমিটারের ঢাকা-সিলেট রেলপথটি ব্রিটিশ আমলের তৈরি। ঢাকা থেকে ভৈরব পর্যন্ত ডাবল লাইন স্থাপন করা হলেও ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত রাস্তাটি রয়েছে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। এজন্য রোববার রাতে ট্রেনটির ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাহাড়ি ছড়ার মধ্যে পড়ে চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক যাত্রী। এ সময় রেললাইনটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনার পর থেকেই সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়রা মনে করেন, একে তো সেতুটি অনেক আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, তার ওপরে ট্রেনটির গতিও ছিল বেশ। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরাইলের শাহবাজপুরে বেইলি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় ঢাকা-সিলেট সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রায় বন্ধ রয়েছে। এ কারণে গতকাল রাতে ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ছিল। অন্য সময় ট্রেনটি ১৫টি বগি নিয়ে যাতায়াত করলেও গতকাল ট্রেনটিতে ১৭টি বগি ছিল।
উদ্ধারকাজে আসা রেললাইনের পাশের গ্রাম নন্দনগরের বাসিন্দা ফারুক মিয়া (৪৫) জানান, ব্রিজের সাইডে পাত দুইডা লাগানো থাকে, জোড়ার মধ্যে। এর এদিকে একটি নাট, ওদিকে আরেকটি নাট। আর কোনো নাট নাই। গাড়ি যখন যায়, তখন খালি কাঁপে, ঝিলকা মারে। প্রায় সময়ই আমরা রেলের মানুষকে বলছি। এখানে একটা সমস্যা ঘটবে। আপনারা দয়া করে দেখেন, সমস্যাটা কী। এখনো আছে। এখান থেকেই সমস্যাটার শুরু হইছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন