ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে সম্ভাব্য ১০ প্রার্থীর দৌড়ঝাপ
সদ্য ঘোষিত শুন্য হওয়া ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল) আসনের উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কাস পার্টিসহ বিভিন্ন দলের ১০ জন নেতা দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন।
এর মধ্যে আওয়ামীলীগের ৫ জন। দলীয় মনোনয়ন পেতে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন তারা। দলের হাইকমান্ডের সাথে যোগাযোগ করতে এরই মধ্যে আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতা ঢাকায় গিয়ে অবস্থান করছেন। পাড়া-মহল্লায় গনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন অনেকে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে হাট বাজার, চায়ের দোকান, রাস্তার মোড় সহ বিভিন্ন জনবহুল স্থানে চলছে আলাপ-আলোচনা।
স্বাধীনতার পর থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এ আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে ছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে আসনটি আওয়ামীলীগের হাতছাড়া হয়। আওয়ামীলীগের প্রার্থী ইমদাদুল হককে হারিয়ে সেবার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজউদ্দীন আহম্মদ এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৩ সাল পর্যন্ত টানা ১৩ বছর এ আসনে সংসংদ সদস্য ছিলেন হাফিজ উদ্দীন। ২০১৪ সালে স্থানীয় আওয়ামীলীগের সমর্থনে হাফিজ উদ্দীনকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন ১৪ দলের শরিক দল ওয়ার্কাস পার্টি অধ্যাপক ইয়াসিন আলী। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অধ্যাপক ইয়াসিন আলী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। এ সময় মটর গাড়ি মার্কা নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি ইমদাদুল হক। লাঙ্গল মার্কা নিয়ে লড়েন জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দীন আহমেদ আর ধানের শীষ মার্কা নিয়ে ভোট করেন জাহিদুর রহমান। সিংহ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন আওয়ামীলীগ নেতা অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায়। পরে প্রশাসনের চাপে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ায় গোপাল।
আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আর জোট-মহাজোটের কোন্দলের কারণে সেবারের নির্বাচনে এ আসনে পরাজিত হয় নৌকা। এমপি নির্বাচিত হন বিএনপি’র জাহিদুর রহমান জাহিদ। সম্প্রতি জাহিদুর রহমান সহ বিএনপি’র সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে শুন্য ঘোষনা করা হয় এ আসন সহ ৬টি আসন। আসন গুলিতে শীঘ্রই উপ-নির্বাচন হবে-নির্বাচন কমিশনের এমন ঘোষনায় নড়ে চড়ে বসেছেন এ আসনের আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কাস পার্টির স্বাম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় মনোনয়ন পেতে তারা লবিং শুরু করেছেন দলের উর্দ্ধতন নেতাদের সাথে। সেই সাথে এলাকায় চালাচ্ছেন গনসংযোগও।
আওয়ামীলীগ থেকে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি ইমদাদুল হক, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সেলিনা জাহান লিটা, পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আলহাজ¦ আখতারুল ইসলাম, পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লব, রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সইদুল হক ,পীরগঞ্জ উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায় দলীয় মনোনয় পেতে কাজ করছেন। দলের হাইকমান্ডের সাথে কথা বলতে এরই মধ্যে ঢাকায় গেছেন আওয়ামীলীগের কয়েকজ নেতা। অন্যরাও ঢাকায় যাবেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত পেলে জাতীয় পার্টি থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি হাফিজউদ্দীন আহমেদ এ উপ-নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে জানান। এরজন্য তাদের প্রাথমিক প্রস্তুতিও রয়েছে বলে জানান দলের স্থানীয় নেতারা।
অপর দিকে ওয়ার্কাস পার্টির জেলা সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক ইয়াসিন আলী, জেলা ওয়ার্কাস পার্টির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ও রানীশংকৈল ডিগ্্ির কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম ও এ উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। তিনারাও কাজ করছেন তৃনমুলে। এখন দলের হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা আছেন।
এছাড়াও জাসদ (ইনু) থেকে এ আসনে উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে চান সিনিয়র সাংবাদিক দীপেন্দ্র নাথ রায়
জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আখতারুল ইসলাম বলেন, এ এলাকার জনগণের সুখে দুখে সব সময় আমি পাশে থেকেছি । ১৮ বছর ইউ’পি চেয়ারম্যান ছিলাম এবার উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছি। এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। এবার আমি নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে দল আমাকে না দিয়ে অন্য যে কাউকেও মনোনয়ন দিয়ে আমি তার পক্ষে কাজ করবো।
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওনয়ানুল হক বিপ্লব জানান, তিনি ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বর্তমানে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সদ্য শুন্য হওয়া ঠাকুরগাঁও- ৩ (পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল) আসনে নৌকা মার্কার মনোনয়ন চান তিনি।
অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায় জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন পেয়ে সেবার তিনি সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গতবার দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করতে হয়েছিল। এবারও তিনি আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সইদুল হক বলেন, আমি ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম এলাকার জনগণের সুখে দুখে সব সময় আমি পাশে আছি । এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্বে আছি। এ উপ-নির্বাচনে শতভাগ আশাবাদী আমি নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে । তবে দল আমাকে যদি মনোনয়ন না দেয়। অন্য যাকে মনোনয়ন দিবে আমি তার হয়ে মাঠে কাজ করবো।
জেলা ওয়ার্কাস পার্টির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ও রানীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম জানান, ওয়ার্কাস পার্টির আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। আর যদি না পাই তাহলে যিনি দলের মনোনয়ন পাবেন তার প্রতি আমি সহ আমার কর্মীদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তকদির আলী জানান, নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটের তফশিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১লা ফেব্রুয়ারী ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সব মিলিয়ে এ আসনে উপ-নির্বাচনের হাওয়া বেশ জোরে সরেই বইতে শুরু করেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন