ঠাকুরগাঁওয়ে সারের জন্য হাহাকার, অভিযোগের তীর ডিলারদের দিকে
ভোর থেকে কৃষক যখন সারের জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন ঘন্টার পর ঘন্টা, তখন রাতের আঁধারে ব্যবসায়ীদের কাছে সার বিক্রি করতে ব্যস্ত ডিলার এমনটাই অভিযোগ ঠাকুরগাঁওয়ে ভূল্লীর কৃষকদের।
শনিবার (১২ নভেম্বর) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা ভূল্লী বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে মের্সাস এম এল ট্রেডার্স (ডিলার) এর মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কৃষকদের সব ধরনের রাসায়নিক সার দেয়ার কথা ছিল। তবে সার নিতে এসে হয়রানির শিকার হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কাছে সার বিক্রির অভিযোগ তোলেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা।
তবে সার সংকটের অভিযোগের বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ রায়কে জানানো হলে তিনি জানান, ঐ ডিলারকে চলতি মাসে ৭ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আর কিছু দিনের মধ্যে আরও প্রায় ১৪ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ দেওয়া হবে। আশা করি সারের কোন প্রকার সংকট হবে না। সবাই পর্যায়ক্রমে সার পাবেন।
অন্যদিকে সার সংকটে কৃষকরা হাহাকার করছে। অনেকই সার না পেয়ে খালি হাতেই ফিরে যাচ্ছেন। ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে ডিলার পয়েন্টে প্রায় সময় সারের জন্য দীর্ঘ লাইনে কৃষকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
চলতি আলুর মৌসুমে সময়মতো সার না পাওয়ায় ফসল উৎপাদন নিয়ে হতাশা ও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন কৃষকরা।
ভূল্লীর বালিয়া ইউনিয়নের কয়েকজন চাষি জানান, সারের অভাবে আমনের আবাদ তেমন ভালো হয়নি। এখন আলুর সময়। ধানের চেয়ে আলুতে বেশি সার লাগে। বিশেষ করে পটাশ, ইউরিয়া ও টিএসপি। কিন্তু পটাশ ও টিএসপি সার তো দূরের কথা বাজারে পটাশ সার বর্তমানে পাওয়া যায় না। এভাবে সার না পেলে চাষাবাদ বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে জানান কৃষকরা।
এক কৃষক অভিযোগ করেন, কৃষি কর্মকর্তারা ও ডিলাররা কৃষককে সার না দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সার কিনতে গেলে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। কৃষিবিভাগ তো আমাদের কথা কানেই নেয় না। তারা শুধু বলেন সার আছে, সার আছে। বাস্তবে আমরা কোনো সার পাচ্ছি না। তাহলে সার যাচ্ছে কোথায়, কে খাচ্ছে?
কৃষকের এ অভিযোগের বিষয়ে ৫ নং বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভূট্টোু চৌধুরী যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নে সারের চাহিদা মেটানোর জন্য কাজ করতেছি। যে পরিমাণে সার বরাদ্দ আছে সে ভাবেই ডিলার বিতরণ করতেছেন। ডিলার যদি বেআইনিভাবে সার বিক্রি করেন সেটার প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স এম এল ট্রেডার্স এর দায়িত্বরত ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিক এর সাথে কথা হলে, তিনি বলেন বিএস এর মাধ্যমে সার বিতরন করা হয়েছে বলে এড়িয়ে যান। এ সময় তিনি পরবর্তীতে যোগাযোগ করতে বলেন।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা ড. আব্দুল আজিজ জানান, সবজি ও আলু চাষের জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার মজুত আছে। উপজেলা প্রশাসনসহ কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক সারের বাজার মনিটরিং করছেন। আর সার বিতরণের সময় প্রশাসনের লোকজন থাকেন। কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামান বলেন, প্রতিনিয়ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সারের বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। আর সার বিতরণের সময় প্রশাসনের লোকজন থাকেন। কোনো ডিলারের অনিয়ম পাওয়া গেলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন