ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে সরকারের বালু, চাঁদা নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে টাঙ্গন নদী থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু অবৈধ ভাবে তোলা হচ্ছে আর এসব বালুর ট্রাক থেকে হাজার হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে হাত করে বালু খেকোরা নদীর সরকারী বালু হরিলুট করছেন। এতে বছরে প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তবে জেলা প্রশাসন বলছেন, রাজস্ব আদায়ে খুব শীঘ্রই অনুমোদিত বালু মহালগুলি ইজারা দেয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলার বড় নদী টাঙ্গন। ভারত থেকে বয়ে আসা এ নদী ঠাকুরগাঁও সদর এবং পীরগঞ্জ উপজেলার বুক চিড়ে প্রবাহিত হয়ে আবার ভারতেই ঢুকেছে। প্রতি বছর এ নদীর বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠে বিস্তৃর্ণ বালুচর। নিয়ম অনুযায়ী এসব চর সরকারী ভাবে ইজারা নিয়ে বালু তোলার কথা থাকলেও কোন রকম ইজারা না নিয়েই দেদার্সে বালু তোলেন এর সাথে জড়িতরা। সুত্র মতে, টাঙ্গন নদীর প্রায় ১৫ টি স্থান থেকে বালু তোলা হয়। এর মধ্যে পীরগঞ্জ উপজেলায় কমপক্ষে ৯টি স্থান রয়েছে। এসব স্থান থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু তুলে বিক্রি করছেন বালু খেকোরা। স্থানীয় প্রশাসনকে হাত করেই চলছে বালু ব্যবসা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী জানান, উপজেলার আজলাবাদ, রাজভিটা, গেঞ্জিডুবা, মশালডাঙ্গী, বনুয়াপাড়া, বাজারদেহা, সাগুনি, চেরকুর ঘাট সহ বিভিন্ন এলাকায় নদী থেকে বালু তুলতে তাদের ট্রাক প্রতি ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা চাঁদা দিতে স্থানীয় একটি চক্রকে। চাঁদা না দিলে ট্রাক আটক করা সহ মারপিটের ঘটনাও ঘটানো হয়। বাধ্য হয়েই চাঁদা দিয়ে বালু তুলতে হয় তাদের। ঐ চাঁদার টাকা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা সহ বিভিন্ন জনের মাঝে ভাগ বাটোয়ারা হয় বলে জানান তারা। সবাইকে ম্যানেজ করেই নদী থেকে বালু তোলা হয় বলে দাবী বালু ব্যবসায়ীদের।

তাবে তারা বলছেন, ইজারা নিয়েই বৈধ ভাবে নদী থেকে বালু তুলতে চান তারা। কিন্তু এ নদীর বালু মহাল ইজারা দেওয়া হচ্ছে না। তারা এ জন্য জেলা প্রশাসনে অনেকবার ঘুরাঘুরিও করেছেন কিন্তু কাজ হচ্ছে না। প্রশাসন মাঝে মধ্যেই তাদের বালুর ট্রাক আটক করে জরিমানা করছে কিন্তু ইজারা দিচ্ছে না। এ অবস্থায় চুরি করেই তাদের বালু ব্যবসা চালাতে হচ্ছে।
নদী থেকে অবৈধ ভাবে সরকারি বালু উত্তোলন এবং সেখান থেকে চাঁদা আয়ের বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা আইন শৃংখলা সভায় আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয় ঐ সভায়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজির বলেন, বালুর ট্রাক থেকে চাঁদা নেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ গত আইন শৃংখলা সভায় উঠেছিল। এ বিষয়ে প্রশাসন সজাগ রয়েছে। বালু তোলার খবর পেলেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
এদিকে পীরগঞ্জের প্রথম শ্রেনির ঠিকাদার রেজওয়ানুল হক বিপ্লব সহ অনেকেই জানান, উন্নয়ন কাজের জন্য বালু একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এটি ছাড়া উন্নয়ন কাজ অসম্ভব। কাজেই বৈধভাবে বালু তোলার ব্যবস্থা করা দরকার। নইলে সরকারের উন্নয়ন কাজ ব্যহত হবে।

জেলা প্রশাসনের একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, টাঙ্গন নদীর বালু মহাল থেকে বছরে প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব। প্রায় দেড় বছর আগে এ নদীর ৮ টি বালু মহাল ইজারা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এখান থেকে সাম্ভাব্য রাজস্ব ধরা হয়েছিল প্রায় ৮৭ লাখ টাকা। বিভিন্ন জরিপের পর এরই মধ্যে বালু মহাল ইজারা দেওয়ার অনুমতি পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বালু নিয়ে তারাও সমস্যায় রয়েছেন। বালু মহালগুলি ইজারা দিতে পারলে সরকার রাজস্ব পাবে। কিন্তু বিভিন্ন দপ্তরের মতামত না পাওয়ার কারণে ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। দেড় বরছ আগের করা আবেদন যাচাই বাছাই করে তিনটি বালু মহাল ইজারা দেয়ার ছাড় পত্র পাওয়া গেছে। র্শীঘ্রই ইজারার ব্যবস্থা করা হবে।