ঢাকঢোল পিটিয়ে গিয়ে দেখলেন দখল সড়ক ফাঁকা
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের খালি করা রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডটি গত দুই-তিন মাস ধরে আবারও দখল হয়ে আছে। শনিবার রাতেও সড়কের দুই পাশে অসংখ্য ট্রাক দাঁড়িয়ে যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা ও যানজট সৃষ্টি করে।
রোববার আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে সেই সড়ক পরিদর্শন করতে যান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা। গিয়ে দেখেন সড়কের দুই দিকই ফাঁকা। নেই কোনো ট্রাক।
রোববার সকালে প্যানেল মেয়র পৌঁছানোর আগে তেজগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মালিক-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ও পুলিশ সদস্যরা সড়ক থেকে ট্রাক সরিয়ে দিচ্ছেন।
বেলা সাড়ে ১১টায় এসে সড়ক পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কার্যালয়ে ট্রাক মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্যানেল মেয়র ও সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বৈঠকে ডিএনসিসির সচিব রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া বলেন, গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যার পর আমি এই রাস্তা দিয়ে গিয়েছি। যাওয়ার সময় আমি দুই পাশে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। এই রাস্তা সবার, এই রাস্তা জনগণের। সড়ককে দখলমুক্ত করতে সবাইকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। আসুন আমরা সবাই হাতে হাত রেখে প্রতিশ্রুতি করি যে, আগামীকাল থেকে আমরা এই আনিসুল হক স্মরণী (প্রস্তাবিত) পরিষ্কার রাখবো।
এ সময় বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি তালুকদার মোহাম্মদ মনির বলেন, পত্রপত্রিকায় যেভাবে দখলের কথা লেখে সেগুলো সঠিক না। আমরা কোনো অবস্থাতেই প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্বপ্নের এই সড়ক দখল হতে দেবো না। তবে ঈদসহ নানা আন্দোলন হরতালের সময় টার্মিনালে গাড়ি বেশি হয়ে যায়, তখন অনেক সময় সড়কে থাকে। সেসময় আমরা মাইকিং করে ট্রাক সরিয়ে দিতে বলি। এ ছাড়াও অনেক বাইরের ট্রাক কারওয়ান বাজারে মালামাল নিয়ে আসে, তারা না জেনেই সড়কে ট্রাক রাখে।
সভায় ট্রাক-কভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মকবুল আহমেদ বলেন, সড়কে ট্রাক রাখার জন্য যানজট সৃষ্টি হচ্ছে- এ কথাটি ঠিক নয়। স্ট্যান্ডের সামনে কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং থাকায় ৫ মিনিট পর পর রেল আসে-যায়। রেলের কারণে জ্যাম সাতরাস্তা পর্যন্ত চলে যায়।
বৈঠকে ট্রাক-মালিক ও শ্রমিক নেতারা দাবি করেন, গণমাধ্যমে ট্রাকস্ট্যান্ড সড়ক দখলের যে ছবি ছাপানো হয় সেগুলো পুরাতন।
সভা শেষে প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, আমি সড়ক দখল করে কোনো ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখিনি। ঈদের সময় কিছু অনিয়ম হয়েছে। তবে মালিক-শ্রমিকরা বলেছেন তারা সড়কে আর ট্রাক রাখবেন না। তেজগাঁওয়ের এই সড়কটি নজরদারি করতে ডিএনসিসি সচিব ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শুধু তেজগাঁও নয়, ঢাকার সব টার্মিনাল সংলগ্ন সড়ক চলাচলের উপযোগী করা হবে।
বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তালুকদার মোহাম্মদ মনির বলেন, আগামীকাল থেকে আমরা সড়কে কোনো ট্রাক দাঁড়াতে দেবো না। যদি কোনো ট্রাক সড়ক দখল করে তবে তার কাগজপত্র জব্দ করে রেকারিং করানো হবে।
এর আগে ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালটি দখলমুক্ত করার অভিযানে যান তৎকালীন ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক। সে সময় তার ওপর হামলা চালায় শ্রমিকদের একটি গ্রুপ। শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহতের গুজবে গাড়ি ভাঙচুর, সড়কে অগ্নিসংযোগসহ শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে আনিসুল হককে ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। তবে পরদিন মেয়রের নির্দেশে পুলিশের তৎপরতায় খালি হয় ট্রাক স্ট্যান্ড। প্রায় কয়েকবছর ধরে বন্ধ থাকা সড়কটি ফিরে পায় নতুন রূপ। তবে আনিসুল হকের মৃত্যুর পর ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে আবারও দখল হতে থাকে সড়কটি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন