ঢাকা-দিল্লির বরফ গলতে পারে বিক্রম মিশ্রির সফরে

সোমবার ঢাকা সফরে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। দুদেশের মধ্যে চলমান সাম্প্রতিক অস্থিরতায় তার এ সফর বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। এই সফর ঘিরে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের বরফ গলতে পারে।

এমন ইঙ্গিত মিলছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলমের কথাতেও।

প্রেস সেক্রেটারি বলেছেন, বিক্রম মিশ্রির সফরের মাধ্যমে চলমান অস্থিরতার নিরসন হবে, এমনটা আশা করছি। আমরা চাইবো ভারতের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও ভালো জায়গায় যাক। যেন দুদেশের মানুষই এর সুফল ভোগ করে। একই সঙ্গে চাচ্ছি ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা ন্যায্যতা, সমতা ও মর্যাদাপূর্ণ হবে। সেদিকেই আমাদের ফোকাস থাকবে।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা সফরকালে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন বলে জানান উপ-প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর।

এই সফরে দুদেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসন হবে কি না—এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, আমরা আশা করছি ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা ভালো হবে। তাদের সঙ্গে আমাদের বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে আমাদের ভাষাগত, ইতিহাস ও সংস্কৃতিগত যোগাযোগ রয়েছে। অভিন্ন অনেক নদী রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের যে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্টতার বিষয় রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। প্রতিটি বিষয়ই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের সঙ্গে করা ‘অসম’ চুক্তির বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনা হবে কি না—এমন প্রশ্নে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ভারতের সঙ্গে আগামীতে কী ধরনের সম্পর্ক হবে তা ভবিষ্যত বলতে পারে। তবে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ছাড়া অসম যেসব চুক্তি রয়েছে তা নিয়ে ভবিষ্যতে অবশ্যই আলোচনা হবে। এটি সামনে বোঝা যাবে।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোকে ‘মিথ্যাচার’ না করে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, আমরা তাদের বলতে পারি, আপনারা আসেন। এসে মাঠে থেকে রিপোর্ট করে যান। ঘটনাস্থলে না এসে কারও মুখের কথায় কোনো প্রতিবেদনে সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায় না। সেজন্য আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কারণ, আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। বিশ্বাস করি যে, তারা এখানে এলে ভারতের টিভি ও গণমাধ্যমে যে ‘অপতথ্য’ ছড়ানো হচ্ছে তা অনেকাংশে দূর হবে।

রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটার প্রতিনিধিদল বৈঠক করেছে। এতে ভারতীয় গণমাধ্যমের ‘অপতথ্য প্রচার’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সব অপতথ্যের বিষয়ে মেটার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। যেন এটিকে ট্যাকল (নিয়ন্ত্রণ) করা যায়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করেছে। এজন্য প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে আসছে।

খোলা বাজারে সয়াবিন তেল না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তারা পুরোপুরি জানাবে। কিন্তু আমরা মনে করছি বাজারে সয়াবিন তেলের কোনো সংকট নেই। যথেষ্ট সয়াবিন তেল আছে। রমজানে যেন সরবরাহ সংকট না হয় সেজন্য সরকার এলসি সহজ করেছে, আন্তর্জাতিক বাজারদর মনিটরিং করছি। রমজানে মানুষ যেন সয়াবিন ও পাম অয়েল সাশ্রয়ী দামে পান, তা নিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা আছে।

শেখ হাসিনাকে ফেরাতে সরকার মৌখিকভাবে এখনো কেন ভারতকে বলছে না—এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, সরকার শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনে সমর্পণ করতে চায়। তার আমলে গণহত্যা হলো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যার মূল নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা। তার আমলে গুম হয়েছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকা পাচার হয়েছে। পুরো বিষয়ে জবাবদিহির জন্য শেখ হাসিনাকে আইনের আওতায় আনা সরকারের কমিটমেন্ট। এটা করবো।

ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, এ চুক্তির কিছু আইনি দিক আছে। সেগুলো পূরণ করে ফেরত চাওয়া যেতে পারে। সে প্রসিডিউরগুলো সরকার পূরণ করছে। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে ফেরত চাইবো।

প্রেস সেক্রেটারি জানান, ফেসবুক দেখছে বাংলাদেশকে ঘিরে কী ধরনের অপতথ্য প্রচার হচ্ছে। মেটার হয়ে এখানে তৃতীয়পক্ষ কাজ করে। যারা ফেক নিউজ, অপতথ্য, ভুল তথ্য ডিটেক্ট করেন, তারা মেটাকে তাদের বিষয়ে অল্যার্ট করবেন। অবশ্যই মেটা তা দেখবে। কারণ, এখানে তাদের ব্যবসা আছে। আমরা চাচ্ছি যেগুলো মিথ্যা, অপতথ্য সেগুলো রিমুভ করা হোক।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পেজে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলোর বিষয়ে সরকার শক্ত অবস্থানে যাবে কি না—এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, এখানে মেটার হয়ে তৃতীয়পক্ষ তদন্ত করে। তারা দেখছে কোথা থেকে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। অনেক সময় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের নজরে আনা হলে, তারা রাষ্ট্রকে সংশয়ের চোখে দেখে। আগের সরকার ভালো ইউটিউবার, ফেসবুকে ভালো মন্তব্যকারী, যাদের ফলোয়ার রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও অ্যাকশনে যেত, পেজ রিমুভের চেষ্টা করত। মেটার কাছে ট্রাস্টের বিষয় আছে। তাই আমরা চাইবো ফেক নিউজ তারা রিমুভ করবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদারও উপস্থিত ছিলেন।