ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ের আংশিক চালু ১ মে

উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে ১ মে থেকে ৪৮ কিলোমিটার ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার ঢাকা বাইপাস উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ আসলাম আলী বলেছেন, ‘আগামী বছরের জুলাই মাসে পুরো বাইপাস এক্সপ্রেসওয়েটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এটির ৬৮ শতাংশ উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং অবশিষ্ট কাজ পুরোদমে চলছে।’

তিনি বলেন, মোট ৪৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে ভোগলা থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমানে অবশিষ্ট ২৮ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজ চলছে।

আসলাম আলী আরও বলেন, ‘ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অস্থায়ীভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য আমরা ২০ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দিয়েছিলাম, যাতে মানুষের যাতায়াত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।’

তিনি বলেন, চার লেনের বাইপাস এক্সপ্রেসওয়েটি উত্তরে ঢাকার উৎপাদন কেন্দ্র ও দক্ষিণে চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ চলাচলের কেন্দ্রস্থলের মধ্যে মালামাল পরিবহণের জন্য একটি কৌশলগত করিডোর।

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে উন্নয়ন কাজ এক বছর বিলম্বিত হয়। আমরা পূর্বাচলে প্রবেশ ও এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বের হওয়ার জন্য আধুনিক সুবিধা সংবলিত একটি ইন্টারচেঞ্জ (ইন্টারক্রসিং) নির্মাণ করব।’

সৈয়দ আসলাম আলী বলেন, ভোগলা থেকে মদনপুর পর্যন্ত বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে প্রতিটি ট্রাক ও গাড়ির জন্য যথাক্রমে প্রায় ১৪০০-১৫০০ টাকা ও ৭০০-৮০০ টাকা টোল ফি দিতে হবে।

প্রকল্পের বিবরণ অনুসারে, ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়েটি আধা-অনমনীয় ফুটপাথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত হচ্ছে, যেখানে কোনো ইট ব্যবহার করা হয়নি। ফলস্বরূপ এটি প্রচলিত পিচের রাস্তার তুলনায় বেশি টেকসই হবে এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ তুলনামূলকভাবে কম হবে।

বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ের উন্নয়ন কাজ ২০২১ সালে শুরু হয়েছিল, যা ২০২৫ সালের জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা ছিল।

এতে বলা হয়েছে, বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) পদ্ধতিতে আনুমানিক ৩ হাজার ৪শ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত হয়েছিল। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এই প্রকল্পের আর্থিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড (বিআইএফএফএল) অনুসারে, সিচুয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ (গ্রুপ) করপোরেশন লিমিটেড (এসআরবিজি), শামীম এন্টারপ্রাইজ (প্রাইভেট) লিমিটেড, (এসইএল) ও ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (ইউডিসি)-এর সহযোগিতায় কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, শামীম এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড ও ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, যেখানে এসআরবিজি’র ৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকল্পের পিপিপি চুক্তিটি সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) ও কনসোর্টিয়ামের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

বিআইএফএফএল জানিয়েছে, প্রকল্পটিতে মূল লাইন ও সার্ভিস লেনের জন্য ছয়টি নতুন সেতু, আটটি নতুন মেইন লাইন ওভারপাস, ৪৬টি বিদ্যমান বক্স কালভার্ট ও লম্বা বক্স কালভার্ট, ৪৯টি নতুন কালভার্ট, ১২টি নতুন চ্যানেল ও আটটি পথচারী ওভারপাস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বাইপাস এক্সপ্রেসওয়েটি চলমান এসএএসইসি সড়ক সংযোগ প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

প্রকল্পের বিবরণে বলা হয়েছে, এক্সপ্রেসওয়ে সম্পূর্ণভাবে চালু হয়ে গেলে, উত্তরবঙ্গ থেকে যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশ না করেই সরাসরি চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে যেতে পারবে।

বাইপাস প্রকল্পের মধ্যে বিদ্যমান দুই লেনের রাস্তাটিকে চার লেনের এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তর করা হবে। উভয় পাশে অতিরিক্ত সার্ভিস লেন থাকবে।

প্রকল্প পরিচালক জানান, এই পুরো রাস্তায় ভ্রমণের সময় যা আগে দুই ঘণ্টা সময় লাগতো, তা কমে এখন মাত্র আধ ঘণ্টা লাগবে।