ঢাকায় গুলিতে নিহত শ্রীবরদীর গনি মিয়ার লাশ গ্রামে আনতে ভিক্ষা করতে হয়েছিল

অভাব অনাটনের পরিবার আরেকটু ভালো থাকবে সেই আশায় ছয় মাস আগে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন গনি মিয়া।
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার স্থানীয় একটি চালকলে কাজ করতেন ৩৮ বছর বয়সী এই যুবক। সে মনে করতো ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালালে পরিবারের অভাব দূর করতে পারবেন, আর্থিক অবস্থা আরেকটু ভালো হবে।
সেই সুদিন আর আসলো না গনি মিয়ার কপালে। বরং কফিনে বাড়ি ফিরে এসেছে গনির প্রাণহীন দেহ। তার পরিবার ডুবে গেছে আরও গভীর হতাশার অতলে।
ঢাকায় তিনি থাকতেন তেজগাঁও এলাকার নাখালপাড়ায়। গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মহাখালীতে গ্যারেজে রিকশা রেখে ঘরে ফেরার পথে একটি গুলি এসে তার বুকে লাগে। সে সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ চলছিল।
এ ব্যপারে গনির বড় ভাই হাফিজ উদ্দিন বলেন, ঐদিন পথচারীরা তাকে দ্রুত নিকটবর্তী একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন, তবে সেখানে কোনো চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না। তখন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কয়েক ঘণ্টা পরে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
মরদেহ বাড়িতে নেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্যও ছিল না গনির পরিবারের। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া মেটাতে তাদের হাত পাততে হয়েছে মানুষের কাছ। শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নে নিজ গ্রামে গণির দাফন সম্পন্ন হয়।
বাড়িতে তার স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জন ক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।
নিরন্তর সংগ্রামের জীবন ছিল গনির। চালকলে কাজ করে যে সামান্য আয় হতো, তা দিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবারের সবার তিনবেলা পেটপুরে খাওয়াও হতো না।
গনির মেজো ছেলের বয়স এখন ১৪ বছর। অভাবের কারণে দুই বছর আগে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। গনি তাকে মাসে ছয় হাজার টাকা বেতনে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে পাঠান।
গনি যখন ঢাকায় যান তখন পরিবারের ওপর দুই লাখ টাকা ঋণের বোঝা ছিল। সেই ঋণ পরিশোধ করতেই গনি ঢাকায় যেতে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন।
গনির বড় ছেলে ১৬ বছর বয়সী শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমাদের অভাব দূর হয়ে ভালো দিন আসবে। কিন্তু এখন আমাদের কী হবে জানি না”
গনি প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বাড়িতে পাঠাতেন, তা দিয়েই চলতো সংসার। নেই কোনো সম্পত্তি।
শহীদুলের আশঙ্কা, ছোট ভাইয়ের মতো তাকেও হয়তো স্কুল ছাড়তে হবে। তাদের তিন বছর বয়সী বোনের পড়াশোনাও হয়তো থেমে যাবে।
‘আমরা জানি না কীভাবে কী করব, কীভাবে ঋণ পরিশোধ করব,’ বলে শহীদুল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন




















