ঢাকায় রোহিঙ্গাদের যে নামে অভিহিত করেছেন পোপ
নিজের বৈশিষ্ট্যের বাইরে গিয়ে সম্প্রতি মিয়ানমারে ‘রোহিঙ্গা’ প্রশ্নে পরোক্ষভাবে কথা বলতে দেখা গেছে ভ্যাটিকান পোপ ফ্রান্সিসকে। বাংলাদেশ সফরে আসার পর পোপ সরাসরি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেন কিনা, বিপন্ন এ জনগোষ্ঠীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হন কিনা তা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে। বৃহস্পতিবার পোপের প্রথমদিনের বাংলাদেশ সফর পর্যবেক্ষণ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস মনে করছে, পোপ এখানে আসার পর তিনি তার সেই পুরনো কণ্ঠস্বর খুঁজে পেয়েছেন। সরাসরি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করলেও অনেকটাই কাছাকাছি যেতে পেরেছেন তিনি।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওই বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, পোপ বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পক্ষে সোচ্চার হলেও এখানেও সরাসরি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করতে দেখা যায়নি তাকে। আবার মিয়ানমারের মতো অতোটা পরোক্ষভাবেও কথা বলেননি তিনি। ঢাকায় এসে পোপের দেওয়া বক্তৃতা শুনে স্পষ্ট করেই বোঝা গেছে তিনি রোহিঙ্গাদেরকে নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের নাম উচ্চারণ করার পরিবর্তে তাদেরকে ‘রাখাইন রাজ্য থেকে আসা শরণার্থী’ বলে উল্লেখ করেছেন ফ্রান্সিস। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার মানবিক সুরক্ষায় বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেছেন তিনি।
আদি জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় স্বীকার করে না মিয়ানমার। তাদের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করতে ‘বাঙালি’ হিসেবে পরিচিত করতে চায় ইয়াঙ্গুন। রোহিঙ্গাদের পালিয়ে মিয়ানমারে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে দেখাতে চায় দেশটি। নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শুধু নাগরিকত্বই কেড়ে নেওয়া হয়নি বরং পদ্ধতিগতভাবে তাদের মৌলিক অধিকারও ছিনতাই করা হয়েছে। মুক্তভাবে চলাফেরা, কাজকর্ম এমনকি বিয়ের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানবিক আবেদন জানাতে গিয়ে চলতি বছরেই দুই দুইবার রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। তবে এবার মিয়ানমারে এসে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করতে সফর শুরুর আগেই স্থানীয় কার্ডিনালের পক্ষ থেকে পোপকে সতর্ক করা হয়েছিল। শব্দটি উচ্চারণ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছিল উগ্র বৌদ্ধদের সংগঠনগুলো। প্রটোকল ভেঙে প্রথমদিনেই পোপকে বাধ্য করা হয়েছিল সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসতে। মঙ্গলবার নেপিদোতে পোপ মিয়ানমার সফরের মূল বক্তব্য হাজির করেন। সেই ভাষণে সরাসরি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করায় মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর একাংশ হতাশা ব্যক্ত করে। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের আরেক অংশ ইঙ্গিত দেয়, মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে,সংখ্যালঘু ক্যাথলিকদের সুরক্ষা দিতে আর রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন জোরদারের আশঙ্কা থেকেই পোপ ফ্রান্সিস পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন ওই জনগোষ্ঠীর নাম উচ্চারণে সমর্থ হননি।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) ইয়াঙ্গুনে এক সংবাদ সম্মেলনে পোপের অবস্থানের ব্যাখ্যা হাজির করে ভ্যাটিকান। ভ্যাটিকান মুখপাত্র এবং প্রভাবশালী মার্কিন সাংবাদিক গ্রেগ বুরকে বলেন, ‘ফ্রান্সিস রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি তার মানে এই নয় যে তিনি রোহিঙ্গাদেরকে নিয়ে পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।’
প্রকাশ্যে রোহিঙ্গা নিয়ে কথা না বললেও একান্ত বৈঠকে পোপ এ ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন বুরকে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন