তফসিল ঘোষণা : কোন পথে এগোবে ঐক্যফ্রন্ট?
সংলাপের মাধ্যমে সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী তফসীল ঘোষণা না করার অনুরোধ জানিয়েছিল জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট। কিন্তু সেই অনুরোধ অগ্রাহ্য করেই আজ তফসীল ঘোষণা হতে যাচ্ছে।
কিন্তু এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে প্রধান বিরোধী জোট- জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের যে আলোচনা চলছিল তাতে গতকাল দ্বিতীয় দফা সংলাপেও কোন অগ্রগতি হয়নি।
তবে কি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বন্ধ হচ্ছে?
এ বিষয়ে বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম খান জানান, যে আলোচনার পথ কোন কোন অবস্থাতেই বন্ধ হওয়া উচিত নয়। উচিত হল যে, শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাওয়া।
তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি শুধু সেই লক্ষ্যেই যে সবকিছু একটা আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে হোক।”
তবে সরকার এ নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দুই দফা আলোচনায় বসেছে।
সেখানে, সরকার কোন জায়গাগুলোয় ছাড় দিতে পারে এবং ঐক্যফ্রন্ট তাদের দাবিগুলোর কতোটুকু পর্যন্ত ছাড় দিতে পারেন – সে বিষয়ে আলোচনা হয়।
কিন্তু সরকারের বক্তব্য এক্ষেত্রে স্পষ্ট নয় বলে অভিযোগ করেছেন নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, “আমরা সরকারের বক্তব্যের যুক্তি বুঝিনা। তারা জনসমক্ষে বলেন যে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু বা সংবিধানের বাইরে কিছু তারা করতে রাজী না। কিন্তু সংসদ ভেঙ্গে দেয়া বা বাতিল করাটা সংবিধান অনুযায়ী হতে পারে। এজন্য সংবিধান সংশোধন করা লাগেনা।”
এছাড়া ইভিএম বন্ধ করার ক্ষেত্রেও সাংবিধানিক কোন বাঁধা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে নির্বাচন এলাকাগুলোকে সশস্ত্র বাহিনীকে মোতায়েন করা, সেটা তাদেরকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে হোক বা না দিয়ে হোক। সে ব্যাপারেও সংবিধানে কোন বিধিনিষেধ নাই বলে নজরুল ইসলাম বিবিসিকে জানান।
এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তার অভিযোগ, “আদালত বেগম জিয়াকে আদালত জামিন দিলেও সরকারের প্রভাবাধীন নিম্ন আদালত সেটা আটকে দিয়েছে।”
“বেগম জিয়াকে এমন মামলায় জামিন অগ্রাহ্য করা হয়েছে, যে মামলার বাকি সব আসামী জামিনে আছে। কাজেই তিনি সরকারের কারণেই তিনি কারাগারে আছেন,” তিনি বলেন।
নির্বাচন বর্জনের পথ?
ঐক্যফ্রন্টের এই দাবিগুলো যদি সরকার মেনে নেয় তাহলে বিএনপি কি নির্বাচনে অংশ নেবে?
এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “না, আমরা বলতে চাই যে আমাদের যে নির্দলীয় সরকারের দাবি, সেটাও আছে আমাদের।”
“কিন্তু এই দাবিগুলো মেনে নিয়ে যদি সরকার বলতো যে আপনাদের নির্দলীয় সরকারের দাবিটা সংবিধানের সঙ্গে যায়না। আমরা সেজন্য সেটা মানতে পারবো না। তাহলে আমরা বিবেচনা করে দেখতাম আর কি যে, আমরা কি করতে পারি। এবং সেখানে কিন্তু একটা সমঝোতার পরিবেশ অন্তত সৃষ্টি হতো।”
নজরুল ইসলাম খানের ভাষ্যমতে, সরকার তার অবস্থানে অনড় ভূমিকায় রয়েছে এবং বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে চাইছে না।
তাহলে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কি সেই ২০১৪ সালের নির্বাচন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হবে? বিএনপি কি তাহলে নির্বাচন বর্জনের পথটাকেই বেছে নেবেন?
বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “না, আমরা এখনও ঠিক ওইরকম কিছু ভাবিনা। আমরা মনেকরি এখনও সময় আছে, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। সরকার গণতন্ত্রের স্বার্থে যুক্তিসঙ্গত আচরণ করবে। আমাদের ন্যায় সঙ্গত যে প্রস্তাবগুলি, সেগুলো তারা মেনে নেবে।”
নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির মধ্যে ভিন্নমত?
নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির মধ্যে ভিন্নমত থাকতে পারে বলে যে প্রশ্ন উঠেছে সেটাকে উড়িয়ে দিয়েছেন নজরুল ইসলাম খান।
বিবিসিকে তিনি বলেন, “দেখুন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পর অনেক গুজব ছিল যে বিএনপি ভেঙ্গে যাবে। বিএনপি বিশৃঙ্খল হয়ে যাবে। কিন্তু সবাই দেখেছে যে গত নয় মাস ধরে আমাদের দল অত্যন্ত ঐক্যবদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ অবস্থায় আছে।”
এখনও দলের প্রতিটি সিদ্ধান্ত সকল পর্যায়ের মতামতের ভিত্তিতে নেয়া হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা সম্পাদকদের সঙ্গে সভা করেছি, যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপদেষ্টাদের সঙ্গে সভা করেছি।”
“আমরা সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেই। আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তে আমরা সবাই একমত থাকি। এখানে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই।”
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন