তাপমাত্রা বাড়লেও আছে শৈত্যপ্রবাহ
দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা বাড়লেও শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত আছে। আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে তাপমাত্রার আরও উন্নতি হবে, সেই সঙ্গে কমতে থাকবে শৈত্যপ্রবাহও। ১৫ জানুয়ারির পর থেকে দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ থাকবে না। আবহাওয়া বিভাগের (বিএমডি) কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে শীত কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রাদুর্ভাব ঘটেছে শীতজনিত নানা রোগের। চাঁদপুরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মতলব আইসিডিডিআরবিতে দৈনিক গড়ে ১৬৫ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সেখানে গত ২১ দিনে সাড়ে ৩ হাজার রোগী ভর্তি হয়েছেন। নওগাঁসহ দেশের আরও কয়েকটি এলাকা থেকে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে। শীতজনিত বিভিন্ন রোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আগুন পোহাতে গিয়ে ৩ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
বিএমডির একজন ডিউটি কর্মকর্তা বুধবার জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে সূর্য আলো দিতে পারছে। পাশাপাশি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে শীতল বাতাসের প্রবাহ আগের মতো নেই। সে কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি শীতও কমছে। ২-৩ দিনের মধ্যে চলমান শৈত্যপ্রবাহ উঠে যাবে। তবে শীতকালের সাধারণ শীত থাকবে। কিন্তু মাঘের প্রথম সপ্তাহ শেষে ফের তাপমাত্রা নামতে থাকবে। তবে এ মাসের শেষের দিকে ফের শৈত্যপ্রবাহ শুরু হবে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বলে। তাপমাত্রা যদি ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামে তবে তা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আর ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে বলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এ হিসাবে দেশের বেশিরভাগ স্থানে বর্তমানে শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এবারের এ শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে ২ জানুয়ারি।
এদিকে শীতের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে কুয়াশার প্রকোপ। শীতে রাস্তাঘাটে লোক চলাচল কমে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। এখনও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় দিনে স্পষ্টভাবে সূর্যের মুখ দেখা যায় না। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি এমন যে, ভোর ও সন্ধ্যায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। দিনে গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়েও বেশি দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছে না। দৃষ্টি সীমা কমে যাওয়ায় রেল চলাচলেও বিঘœ ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া রেল গন্তব্যে দেরিতে পৌঁছাচ্ছে।
শৈত্যপ্রবাহে ঠাণ্ডাজনিত রোগ-বালাইয় বেড়ে চলেছে। চিকিৎসকরা জানান, শৈত্যপ্রবাহ যখন কমতে থাকে, তখন বিভিন্ন শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এসব রোগে সাধারণত শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হন। তাই তাদের দিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতজনিত রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর প্রতিনিধি জানান, তীব্র শীতে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৭২), ধান্যখোলা গ্রামের আবদুল কুদ্দুস বয়াতি (৬৫), পুরাতন তেঁতুলিয়া গ্রামের বাবর আলী (৭৫) ও করিমপুর গ্রামের আবুল কাশেম মঙ্গলবার রাতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে তাদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। এনিয়ে চলতি শীত মৌসুমে শৈত্যপ্রবাহে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলায় ৭ জনের মৃত্যু হল। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার জীবননগরে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাটোর রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে এক বৃদ্ধার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, শীতে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান ও নাটোর রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার অশোক চক্রবর্তী জানান, গত কয়েক দিন ধরে বৃদ্ধা সন্ধ্যার পর রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে ঘুমাতেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকেও তিনি রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে আর ঘুম থেকে উঠেননি। ওদিকে নাটোর রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে মঙ্গলবার রাতে ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ত্রাণ শাখা থেকে ৪শ’ এবং শহরে সাড়ে ৪ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়। অথচ সেই রাতেই শীতবস্ত্রের অভাবে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়।
রংপুর ব্যুরো জানায়, তীব্র শীত নিবারণ করতে গিয়ে রংপুর অঞ্চলে আগুন পোহাতে গিয়ে গত ৪ দিনে ৩ নারীর মৃত্যু হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রমেক) বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মারুফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া একই ঘটনায় দগ্ধ হয়ে ১৮ জন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
নীলফামারীর কুঠিসদর এলাকার ফয়জুন নেছা (৯০) ও জলঢাকা সদরের খায়রুন নেছা (৫৫) মঙ্গলবার মারা গেছেন। বুধবার মারা গেছেন রংপুর নগরীর নিউ জুম্মাপাড়া মহল্লার মনি বেগম (৭৫)। রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার আবদুল মতিন (৬৭) নামে একজন আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন।
চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলায় রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২১ দিনে মতলব আইসিডিডিআরবিতে সাড়ে ৩ হাজার রোগী ভর্তি হন। প্রতিদিন গড়ে আসছে ১৬৫ জন করে। এ রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তিনগুণের বেশি। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ২ হাজার ৬৯৪ জনের বয়স ৫ বছরের মধ্যে। বাকি ৬৭৪ জনের বয়স ৫ বছরের ঊর্ধ্বে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন