তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীদের শ্রেণি বিভাগ ও ক্ষতিপূরণ
শান্তি ও সৌন্দয্যের ধর্ম ইসলাম। কুরআনুল কারিমের পাতায় পাতায় এ সৌন্দর্যের বর্ণনা করেছে মহান আল্লাহ। আর এ কুরআনকে মানুষের জীবন পরিচালনার গাইড হিসেবে নাজিল করেছেন।
আল্লাহ তাআলা কুরআন কারিমে মানুষের শান্তি ও সুশৃঙ্খল দাম্পত্য জীবনের জন্য এমন অনেক নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করেছেন। যার সুন্দর ও সঠিক সমাধান দেয়া কোনো মানুষের পক্ষে সহজ নয়। এমনই একটি বিষয় হলো নারীদের বিবাহ ও মোহর।
মোহর নির্ধারণ ছাড়া বিবাহ এবং সংসার করার আগেই আবার তালাক; এ সব ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর করণীয় কি? এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে করণীয় ঘোষণা করেন-
আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ২৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ওই সব নারীদের সম্পর্কে বিধান জারি করেছেন, ‘যাদের বিয়ে হয়েছে কিন্তু মোহর নির্ধারণ হয়নি এবং স্বামী তার স্ত্রীকে স্পর্শ করেনি। তাদের সমস্যা সমাধানে আলোচ্য আয়াত নাজিল হয়।
যে সব নারীর বিয়ে হয়েছে মোহর নির্ধারণ ছাড়া। কিন্তু স্বামীর সংসার করার আগেই বিনা স্পর্শে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বামী কর্তব্য হলো তার সামর্থ অনুযায়ী তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে কিছু দিয়ে দেয়া। এটি আল্লাহ তাআলার বিধান। যার বাস্তবায়ন আবশ্যক কর্তব্য।
এ আয়াতের মাধ্যমেই প্রতিয়মান হয় যে, আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি কতটা দয়াবান। যে স্ত্রীকে স্বামী স্পর্শ করেনি তাকে কিছু সম্পদ দেয়ার কথা বলেছেন। কি পরিমাণ সম্পদ দিতে হবে তা নির্ধারণ না করে স্বামীর সামর্থ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
স্বামী যদি সম্পদশালী হয় তবে স্ত্রীকে যথারীতি দ্রব্য সামগ্রী দেবে। পক্ষান্তরে স্বামী যদি দরিদ্র হয় তবে তার সামর্থ অনুযায়ী স্ত্রীকে সম্পদ দেবে।
তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীদের শ্রেণিবিভাগ
বিখ্যাত তাফসীরকারকগণ তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীদেরকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন। আর তাহলো-
>> যাদের মোহর নির্দিষ্ট হয়েছে এবং স্বামী-স্ত্রী মিলনের পর তালাক দেয়া হয়েছে; এদের সম্পর্কে ইসলামের বিধান পূর্ববর্তী আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। তাদের সম্পর্কে হুকুম হলো-
তাদের মোহরানার হক্ব আদায় করতে হবে এবং তাদেরকে কষ্ট দিয়ে কোনো কোনো জিনিস ফেরত নেবে না এবং তাদের ইদ্দত হলো তিন ঋতুস্রাব পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
>> যে সব স্ত্রীলোকদের মোহর নির্দিষ্ট হয়নি এবং স্বামী তাকে স্পর্শও করেনি, বিয়ের পরই তালাক হয়ে গেছে তাদের সম্পর্কে আলোচ্য আয়াতে বিধান ঘোষণা হয়েছে যে, তাদেরকে মোহরানার হক্ব দেয়া হবে না, শুধু নিয়ম মাফিক কিছু খরচ-পত্র দিতে হবে। এদের কোনো ইদ্দত পালন করারও প্রয়োজন হবে না।
>> যে সব স্ত্রীলোকদের দেনমোহর নির্দিষ্ট হয়েছে অথচ স্বামী তাদেরকে স্পর্শ করেনি এদের সম্পর্কে পরবর্তী আয়াতে ঘোষণা রয়েছে- ‘মোহরানা অর্ধেক তাদেরকে দিতে হবে তবে তাদের ইদ্দত পালন করতে হবে না।
>> যে সব স্ত্রীলোক যাদের মোহরানা নির্ধারিত হয়নি, কিন্তু তাদের স্বামী-স্ত্রীর মিলন হয়েছে; তাদের সম্পর্কে বিধান হলো- সেই স্ত্রীলোকের আত্মীয়-স্বজনের যে পরিমাণ মোহর নির্দিষ্ট হয়েছে সে পরিমাণ তাকে দিতে হবে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আলোচ্য আয়াতের খরচ-পত্রের পরিমাণ সম্পর্কে বলেছেন, ‘যদি সঙ্গতি থাকে তবে তাকে একজন খাদেম দেয়া উচিত। তা না হলে কিছু রৌপ্য সামগ্রী অথবা কমপক্ষে তাকে পোশাক দেয়া উচিত।
মনে রাখতে হবে
তালাক হলো ইসলামে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল কাজ। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইসলামও তালাকের অনুমোদন দেয়নি। তাই সুখী দাম্পত্য জীবন লাভে ইসলামের বিধানের প্রতি গুরুত্বারোপ করা জরুরি। যে বিধানের যথাযথ বাস্তবায়ন মানুষের দাম্পত্য জীবনকে করে তোলে সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্যময়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহ কুরআনের সোনালী বিধানগুলো জানা এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রে জীবনের প্রয়োজনে এ বিধানগুলোর প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন