থার্টি ফার্স্ট উদযাপনে কক্সবাজার সৈকতে ৫ লাখ পর্যটক
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2017/12/coxbazar-l-20171230204820.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
রোববারের সূর্য পশ্চিমাকাশে ডুব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদায় হবে ২০১৭ সাল। শুরু হবে নতুন বছরের সূর্যোদয়ের প্রতীক্ষার পালা। সূর্য ডুবার এ রাতেই পৃথিবীর হালখাতা থেকে স্মৃতি হয়ে যাবে ২০১৭ সাল নামের একটি বছর।
পথচলা শুরু হবে ২০১৮ ইংরেজি বছরের। বিদায়ের বেদনার মাঝেও ৩৬৫ দিনের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব পেছনে ফেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় ৩১ ডিসেম্বর রাতে ২০১৮ সালকে স্বাগত জানিয়ে পালন করা হবে থার্টি ফার্স্ট নাইট।
প্রতিবছর এ উপলক্ষে পর্যটন নগরী খ্যাত কক্সবাজার লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। বিগত দেড় দশক এমন চিত্রই দিয়েছে বালিয়াড়ি। এবারও থার্টি ফার্স্ট এবং বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে কক্সবাজার সৈকত ও আশপাশের পর্যটন এলাকায় অতিথি ও স্থানীয় মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ পর্যটক সমাগম হবে এমনটি প্রত্যাশা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
গত এক দশক থেকে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে বেসরকারি টেলিভিশন কিংবা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সৈকতে উন্মুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বর্ষবরণ জমিয়েছে। তারকা হোটেলগুলো আয়োজন করতো ইনডোর অনুষ্ঠান। যেখানে বহিরাগতরাও অংশ নিতে পারতেন।
কিন্তু এবার থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে সৈকত তীরে উন্মুক্ত বা বাউন্ডারি ভুক্ত কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তারকা হোটেলগুলোও সবার জন্য করছে না কোনো আয়োজন। তবে হোটেল ওশান প্যারাডাইজ, সায়মন বিচ রিসোর্ট ও রয়েল টিউলিপ সি পার্ল ইনহাউজ গেস্টদের জন্য আয়োজন করছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এবার বাইরের কোনো অতিথিকে এসব উপভোগের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তাই এবারের থার্টি ফার্স্ট নাইট বা নতুন বছর বরণকে ‘প্রাণহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন পর্যটকরা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহিদুর রহমানের মতে, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে বিচে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকরা চাইলে রাত ১২ পর্যন্ত বিচে ঘুরতে পারবেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে। কিন্তু রাত ১০টার পর হোটেলের সব বার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শহরের অভ্যন্তরে যানজট কমাতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে থার্টি ফার্স্ট নাইট উৎসবের আগেই বিজয় দিবস ও শীতকালীন ছুটিকে উপলক্ষ্য করে পর্যটকে ভরে গেছে কক্সবাজার। সমানতালে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন সমুদ্র সৈকত, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, শাহপরীরদ্বীপ, ইনানী, হিমছড়ি, রামুর বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ, সোনাদিয়াসহ পুরো কক্সবাজারের পর্যটন স্পটে। পর্যটক আকৃষ্ট করতে সাজানো হয়েছে এসব স্থান। ইংরেজি নতুন বছর ২০১৮ সালকে স্বাগত জানাতে প্রায় ৫ লাখ পর্যটকের মিলন মেলায় মুখরিত হয়ে উঠবে পর্যটন নগরী। এর ধারাবাহিকতা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে বলে ধারণা তাদের।
কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশ্যান প্যারাডাইস’র পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, ২০১২-২০১৩ সালে পর্যটন মন্দার মাঝেও আমরাই ইনডোর প্রোগ্রামগুলো চালু করে থার্টি ফার্স্ট নাইটকে পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য করে তুলি। পর্যটকদের চাহিদার কারণে এবারও বলরুমে ইনহাউজ গেস্টদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাইরের গেস্টদের জন্য হোটেলের ছাদের রেস্তোরাঁয় রসালো ম্যানোতে সাশ্রয়ী মূল্যে রাখা হয়েছে ব্যুফে ডিনার। এখানে ওপেন কনসার্ট উপভোগ করে রাতের খাবার সারতে পারবেন অতিথিরা।
সায়মন বিচ রিসোর্টের ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ ম্যানেজার ইমরান হোসেন জানান, তারকা কণ্ঠশিলী তাহসান ও অন্যদের নিয়ে আভ্যন্তরীণ গেস্টদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।
একইভাবে গত ২৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য কার্নিভাল স্টাইলে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে ইনানীর রয়েল টিউলিপ সিপার্ল হোটেল এমনটি জানিয়েছেন হোটেলটির অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক আমজাদ।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার জানান, কক্সবাজারে ছোট-বড় চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে দৈনিক প্রায় ১ লাখ লোকের থাকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া এসবের বাইরেও এক লাখ মানুষ অ্যাপার্টমেন্টসহ বিভিন্নভাবে কক্সবাজারে অবস্থান করে। ইতোমধ্যেই কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলোর প্রায় সব কক্ষই বুকিং হয়ে গেছে। আগামী এক সপ্তাহ এমনটি থাকবে বলে আশা করা যায়।
হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) শফিকুর রহমান কোম্পানির মতে, প্রতিদিন যে হারে পর্যটক আসছে তাতে থার্টি ফার্স্ট নাইটে আবাস সংকট দেখা দিতে পারে। এখন থেকে প্রস্তুতি না নিলে নারী ও শিশুদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে। এসব নিয়ে কারও মাথা ব্যথা দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদারে অতিরিক্ত পুলিশ আনা হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অফরুজুল হক টুটুল বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট ও পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে সমুদ্র সৈকতে পুলিশের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। সাদা পোশাকে কাজ করছে ৫০ পুলিশ সদস্য।
এছাড়া সোমবার রাত থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান। ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছ অর্ধশত চিহ্নিত ছিনতাইকারীকে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সিসি টিভি বসানো হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিকী বলেন, সাতটি প্রমোদতরি (জাহাজ) নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ছয় হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন যাচ্ছে। তাদের নিরাপত্তায় আমরা সর্তক রয়েছি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, পর্যটক হয়রানি বন্ধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দেয়া আছে। পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে পূর্বের সময়ের চেয়েও পর্যটক সেবার প্রতি বাড়তি নজর দিচ্ছে প্রশাসন। সার্বক্ষণিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পর্যটন এলাকায় টহলে রয়েছে। পর্যটক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ ও র্যাব মাঠে থাকবে।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন