দামি মোবাইলের জন্য এ কি করলেন সুন্দরী কলেজ ছাত্রী!

প্রিন্স রায়, কলকাতা থেকে :দামি মোবাইলের শখ৷ অথচ বাড়ি থেকে এত টাকা মিলবে না৷ তাই মোবাইল কেনার টাকা জোগাড় করতে অপরিচিতর সঙ্গে হোটেলে রাত কাটালেন এক সুন্দরী কলেজ ছাত্রী৷ খবর ইন্ডিয়া টাইমসের।

শুক্রবার গভীর রাতে দমদম রোডের পাশে আদতে জলপাইগুড়ির বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ওই পড়ুয়াকে মত্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ৷ নেশার ঘোর কাটার পর ওই তরুণীর বয়ান শুনে পুলিশের অফিসাররাও হতবাক৷ তিনি খোলাখুলিই স্বীকার করেছেন, বাবা দামি মোবাইল কেনার টাকা না -দেওয়াতেই তার এই সিদ্ধান্ত৷

এটা কোনও বিক্ষিন্ত ঘটনা নয়, কলকাতা পুলিশ ও সমাজতত্ত্ববিদরা বলছেন , এমন ঘটনা এখন ঘটছে মাঝেমধ্যেই৷ নামী রেস্তোরাঁর ডিনার, ঝাঁ-চকচকে শপিং মলে ভালো ব্র্যান্ডের পোশাক, নিত্য -নতুন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর টানে বাইরে থেকে আসা স্কুল -কলেজ পড়ুয়াদের অনেকেই এ পথে হাঁটছেন৷ জলপাইগুড়ির বাসিন্দা ওই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি সল্টলেকের একটি নামী বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়েন৷ দমদমে বন্ধুদের সঙ্গে একটি মেসে থাকেন বছর তিনেক৷

পুলিশের দাবি ওই তরুণী জানিয়েছেন, তার সব বন্ধুরই দামি মোবাইল রয়েছে৷ অথচ, বারবার আর্জি জানিয়েও তার বাবা তা কিনে দিতে রাজি হননি৷ সে জন্যই ফেসবুকে আলাপ হওয়া একজন পরিচিতের সঙ্গে হোটেলে যেতে দ্বিধা করেননি তরুণী৷ তার বিনিময়ে ন ’হাজার টাকা দিতে রাজি হন ওই যুবক৷ ওই ছাত্রীর দাবি, এ শহরের লাইফ স্টাইলের সঙ্গে পাল্লা দিতে মেস-হোস্টেলে থাকা অনেকেই এ কাজ করে থাকে৷

ওই তরুণীর মুখে একথা শুনে হতবাক ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কর্তারাও৷ এক পুলিশকর্তা বলছেন , ‘এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট , নিজের শখ পূরণের জন্য বর্তমান প্রজন্ম কতদূর যেতে পারে৷’ কী ভাবে ওই তরুণীর খোঁজ পেল পুলিশ? ব্যারাকপুর কমিশনারেট সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত দেড়টা নাগাদ দমদম রোডে নজরদারি চালাচ্ছিল একটি পুলিশ ভ্যান৷ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের নজরে পড়ে, হনুমান মন্দির সংলগ্ন ব্রিজের উপর অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এক তরুণী৷

পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ সুস্থ হওয়ার পরেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ওই তরুণীর অন্য সহপাঠীদের স্মার্টফোন আছে৷ তরুণী দীর্ঘদিন ধরে অনুরোধ করলেও বাবা -মা তা কিনে দেননি৷ সে -কারণেই তিনি এক বান্ধবীর পরামর্শে ফোন কেনার তাগিদেই শুক্রবার রাতে এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সঙ্গে হোটেলে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন৷

তবে হোটেল থেকে বেরোনোর পরই তার মনে হয় , তিনি ভুল করেছেন৷ সেই দুঃখেই তিনি অতিরিক্ত নেশা করেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ওই তরুণী৷ তার মুখে পুরো ঘটনার কথা শুনে তার কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর৷

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (জোন -২) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘এই ধরনের কোনও কেস পেলেই আমরা ওই তাঁদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করে পরিবারের হাতে তুলে দিই৷ কোনও -কোনও ক্ষেত্রে হোমের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পদক্ষেপ করা হয়৷’

শহরে পা রেখে জেলা শহরের তরুণীরা যে শখপূরণের তাগিদে পার্ট টাইম দেহব্যবসায় যুক্ত হয় তা স্বীকার করে নিয়েছেন দমদমের একটি মেসের মালিকও৷ তার আক্ষেপ , ‘অভিভাবকরা আমাদের তাদের সন্তানদের খেয়াল রাখার কথা বলেন ঠিকই৷ তবে সকলকে তো চোখে-চোখে রাখা সম্ভব নয়৷’

লেকটাউন থানায় দীর্ঘদিন ধরে বড়বাবুর দায়িত্ব সামলে এসেছেন ত্রিগুণা রায়৷ বর্তমানে ঝালদা থানার বড়বাবুর দায়িত্বে থাকা ওই অফিসারের কথায়, ‘জেলা শহর থেকে কলকাতায় এসে এখানকার লাইফ স্টাইলের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়েই তরুণীরা এমনটা করে থাকেন৷ আমি লেকটাউনে থাকার সময় এ রকম বেশ কিছু কেস পেয়েছি৷’