দীপন হত্যাকাণ্ড : দুই বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি ডিবি
জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার দুই বছর পূর্ণ হলেও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, খুনিরা শনাক্ত হলেও সবাইকে গ্রেফতার করতে না পারায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে সময় লাগছে।
প্রকাশক দীপন হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য মাঈনুল হাসান শামীম, আব্দুস সামাদ ওরফে আব্দুস সবুর ও খায়রুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হত্যার ঘটনায় আসামি শামীম ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সবুরকেও কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান বলেন, দীপন হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা তিনজনই হত্যার ঘটনায় ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আরও বেশকিছু আসামির নাম আমরা পেয়েছি। সেগুলো ছদ্ম নাম হলেও শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশকে কী জানিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ফজলুর রহমান বলেন: যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়ের বই ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ প্রকাশ করার কারণেই ‘জাগৃতি’র প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা হয় বলে তারা জানিয়েছে।
ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন: প্রধান আসামি মইনুল হাসান শামীম দীপন হত্যার সময় নিজেকে মাসুম হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। শামীম ওরফে সিফাতের বাড়ি সিলেটের সুনামগঞ্জ এলাকায়। সে মদন মোহন কলেজের ছাত্র ছিল। দীপন হত্যাকাণ্ডের সময় শামীম আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এটিবি) সদস্যদের প্রশিক্ষক ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিল।
সিটিটিসি ইউনিট কর্মকর্তা বলেন: দীপন হত্যাকাণ্ডে পাঁচজন প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিল। ঘটনার আগে তারা সবাই গাজীপুরের টঙ্গীর একটি বাড়িতে এক মাস আগে থেকেই প্রশিক্ষণ নেয় এবং মহাখালীর এক বাসায় অবস্থান করে তারা হত্যার জন্য রেকিও করে। দীপন হত্যার সঙ্গে বরখাস্ত মেজর জিয়ারও একটা সম্পর্ক ছিল।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ মাসে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় ২২ বার পিছিয়েছে। এ বিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, খুনিরা শনাক্ত হলেও সবাইকে গ্রেফতার করতে না পারায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে সময় লাগছে। তবে শিগগিরই এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।
হতাশ হলেও আলো জ্বেলে রেখেছে দীপনের পরিবার
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় দফায় দফায় পেছানোর কারণে হতাশা প্রকাশ করেছে দীপনের পরিবার। দীপনের স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান জলি বলেন, দুই বছরেও দীপন হত্যার বিচার হয়নি। আমরা পুলিশের কাছে গেলেই তারা জানায় খুব শিগগিরই চার্জশিট দিবো, অন্য আসামিদের গ্রেফতার করব।
‘আগামী প্রজন্ম যেন মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে যেতে পারে তার জন্য কাজ করে যেতে চাই,’ জানিয়ে দীপনের স্ত্রী বলেন: দীপনের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চাই। আমাদের কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যেই আমরা এলিফ্যান্ট রোডে দীপনপুর নামে একটি বুক শপ ক্যাফে চালু করেছি।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর বিকালে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
একইদিন রাজধানীর লালমাটিয়ায় আরেক প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে জঙ্গিরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন