দেবর-জায়ের পরকীয়া দেখে ফেলায় খুন বাবলী?
মৌলভীবাজার : প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে ব্যাংকে যৌথ অ্যাকাউন্ট আর দেবরের সঙ্গে জায়ের পরকীয়া দেখা ফেলাই কাল হয়েছিল বাবলী আকতারের (২৬)। তাই তো তাকে অকালেই চলে যেতে হলো পাঁচ বছর আর এগারো মাস বয়সী দুই পুত্রসন্তানকে ফেলে।
শুক্রবার (১৬ জুন) সকালে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের মনির মিয়ার বাড়ি থেকে তার পুত্রবধূ বাবলী আকতারের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বাবলী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মল্লিকসরাই গ্রামের হাজি আয়াছ মিয়ার মেয়ে। আর তার স্বামী সৌদি প্রবাসী সরুক মিয়া জেলার রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের মনির মিয়ার ছেলে।
এঘটনায় রাতেই বাবলীর দুলাভাই হারুন আহমদ বাদী হয়ে নিহতের শাশুড়ি, জা, ননদসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে রাজনগর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। শনিবার (১৭ জুন) বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে বাবলীর লাশ তার বাবার বাড়ি মল্লিক সরাই গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে, মামলা দায়েরের পরই পুলিশ বাবলী আখতারের শাশুড়ি, জা, ননদসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে সৌদি প্রবাসী সরুক মিয়ার সঙ্গে বাবলী আখতারের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তাদের ঘরে ৫ বছর ও ১১ মাস বয়সী দুটো পুত্রসন্তান আসে। সুরুক মিয়া তার পরিবারের অন্য সদস্যদের অজান্তে মৌলভীবাজারের সাউথইস্ট ব্যাংকে ও ইসলামি ব্যাংকে একক ও যৌথ একাউন্টে বিদেশ থেকে আয় করা প্রায় ৩২ লাখ টাকা জমা রাখেন।
কিছুদিন আগে বাবলী আখতারের ননদ মিলন বেগম তার ড্রয়ারের তালা ভেঙে ব্যাংকের সব কাগজপত্র নিয়ে নেন। এ নিয়ে বাবলীর সঙ্গে শাশুড়ি, ননদ ও জায়েদের বিরোধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে তারা সবাই মিলে বাবলীর ওপর নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি মাঝে মাঝেই বাবার বাড়ি চলে যেতেন। ঘটনাটি স্বামী সুরুক মিয়াও জেনে যান।
অপর দিকে, বাবলী আখতারের জা রুমা বেগমের সঙ্গে পাশের বাড়ির দেবর তুহিন মিয়ার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠার বিষয়টি একদিন দেখে ফেলেন বাবলী আকতার। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রুমা বেগম। বাবলীর মুখ বন্ধ করতে প্রায়ই শাসাতেন আর নির্যাতনে অংশ নিতেন।
সপ্তাহ খানেক আগে বাবলী আখতার বাড়ি গিয়ে তার মা জাহানারা বেগমকে নির্যাতনের কথা জানান। এমনকি রুমা বেগম তাকে মেরে ফেলার যে পরিকল্পনা করছে সেটাও জানিয়ে দেন মাকে। সেই ভয় আতঙ্ক নিয়েই শুধু দুই সন্তানের মুখের দিতে তাকিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসেন বাবলী।
কিন্তু শুক্রবার (১৬ জুন) ঘটনার দিন সকালে রুমা বেগম ফোন দেন বাবলীর মা জাহানারা বেগমকে। জানান বাবলী গুরুতর অসুস্থ। তাকে দেখার জন্য দ্রুত সেখানে যেতে বলেন। কিন্তু জাহানারা বেগম দিয়ে দেখেন বাবলী লাশ পড়ে আছে শ্বশুরবাড়ির উঠানে।
এ ঘটনায় বাবলীর দুলাভাই কমলগঞ্জ উপজেলার বড়চেক গ্রামের হারুন মিয়া বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাবলীর জা রুমা বেগম (৩০), শাশুড়ি মাখন বিবি (৫৫), ননদ মিলন বেগমসহ (৩৫) তুহিন মিয়া (৩১) ও লেছু মিয়াকে (৫০) গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজনগর থানার উপপরির্দশক (এসআই) আলাউদ্দীন বলেন, এজহারনামীয় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন