দেশকে ভয়াবহ সংঘাতে নিয়ে যাবে : পীর সাহেব চরমোনাই
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর ) বাদ জুমা রাজধানীর মিরপুর-১ ঈদগাহ মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, সরকারের একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটা দেশকে ভয়াবহ সংঘাতে নিয়ে যাবে। এই ভয়াবহ সংঘাত থেকে দেশ রক্ষা করতে পারে কেবল জাতীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ফের ক্ষমতায় আসলে দেশের স্বাধীনতা হুমকিতে পরবে। ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস হবে।
ভারতের হিন্দুত্ববাদী শক্তি এদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সুযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে। ইসলামী শিক্ষা ভয়াবহ সঙ্কটে পরবে। পীর সাহেব চরমোনাই সংঘাত থেকে দেশকে রক্ষায় ক্ষমতা ছেড়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশ ভয়াবহ সংঘাতের মুখে নিপতিত। তফসিল ঘোষণার পূর্বেই জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করলে নির্বাচন কমিশনকে চরম খেষারত দিতে হবে। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই ৭ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ, ১৩ অক্টোবর ঢাকায় শ্রমিক সমাবেশ, ২০ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ছাত্র যুব-সমাবেশ এবং অক্টোবর ও নভেম্বরে সারাদেশে ইউনিয়ন ইউনিয়নে সদস্য সম্মেলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে চলতি সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (চজ) পদ্ধতির প্রবর্তন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অবহেলা ও চরম অব্যবস্থাপনা নিরসন, দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান বক্তা ছিলেন দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ।
নগর উত্তর সভাপতি পিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে নগর সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের নায়েবে আমীর আল্লামা আব্দুল হক আজাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারি মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, যুবনেতা মাওলানা নেছার উদ্দীন, ছাত্রনেতা শরীফুল ইসলাম রিয়াদ, নগর সেক্রেটারী মাওলানা আরিফুল ইসলাম, নগরসহ-সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন, মাওলানা নুরুল ইসলাম নাঈম, আলহাজ্ব হাসমত আলী, ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ হোসেন, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, মুফতী সিরাজুল, ইসলাম, মুফতী মোঃ মাছউদুর রহমান, রাকিবুল ইসলাম, মুহাম্মাদ নাজমুল হাসান প্রমুখ।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে দেশে বাকশাল কায়েম করেছে। আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, চিকিৎসা বিভাগ, নির্বাচনী ব্যবস্থা, শিক্ষাঙ্গণসহ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে এর বিকল্প নেই। জনগণ যেভাবে ফুঁসে উঠছে, তাতে সরকারের আখের রক্ষা হবে না।
তিনি বলেন, সরকার উন্নয়নের কথা বলে জনগণের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দেশে এখন জনগণ নিজের ভোট নিজে দিতে পারে না। জনগণ আজ তাদের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার থেকে বঞ্চিত। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা ওয়াদা দিয়েছিলেন যে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, তিনি জাতিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি তারা দিনের ভোট রাতে বাক্সে ভরে নিজেদের ক্ষমকার চেয়ার পাকাপোক্ত করেছে। আজকে জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। দুর্নীতিবাজ, লুটেরা এবং বিদেশী তাঁবেদার শক্তি দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। উন্নয়নের নামে দেশে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। পীর সাহেব বলেন, সরকার প্রধান যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায় ভিসা নীতি কার্যকর করার ঘোষণা সরকারের জন্য লজ্জাজনক। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ ভেবেছিলেন বাইডেনের সঙ্গে ছবি তুলে সব সুরাহা করা যাবে। ভিসা নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, জনগণের ভোট ও বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র। ভিসা নীতি স্বাধীন সার্বভৌম জাতির জন্য সম্মানজনক নয়।
মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেন, প্রশাসনের লোকেরা জনগণের কর্মচারী। আপনারা জনগণের অধিকার নষ্ট করবেন না। সংবিধান স্বীকৃত সভা সমাবেশ করতে বাধা দেবেন না। সব ধরনের প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধ করুন, তবেই জনগণ আপনাদের ভালোবাসবে। তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের নাগালে রাখার দাবি জানান। সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে সরকারকে চরম খেসারত দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, বর্তমান সরকার জগদ্দল পাথরের মতো আমাদের উপর চেপে বসেছে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা দুর্নীতি করে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। দেশ দেউলিয়ার পথে। যে কোন সময় দেশ অর্থনৈতিকভাবে সঙ্কটে পরবে। এমতাবস্থায় সরকারকে পদত্যাগ করে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে। জনগণ রাজপথে নেমে আসছে সরকারের আখের রক্ষা হবে না। ডেঙ্গু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকার দুই মেয়র কথার ফুলঝুড়িতে আছে, কোন কাজে নেই। মেয়রদ্বয় চরমভাবে ব্যর্থ। দুই মেয়রের পদত্যাগ দাবি করছি। নগরবাসীকে এরা ডেঙ্গু ফেলে দিয়ে এরা নিজেরা বাঁচতে বিদেশে পাড়ি দেয়। এরা জনগণের মেয়র নয়। এরা বুর্জোয়া, নগরবাসী এদেরকে আর মেয়রের আসনে দেখতে চায় না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন