দেশেই তৈরি হবে স্মার্টকার্ড
উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) এখন থেকে দেশেই তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আপাতত বন্ধ থাকলেও আগামীতে দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সহায়তায় স্মার্টকার্ড তৈরি করা হবে। এ কাজে বিএমটিএফকে সহযোগিতা করবে টাইগার আইটি।
স্মার্টকার্ড সরবরাহকারী ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ওবের্থার টেকনোলজিসের (ওটি) সঙ্গে সম্প্রতি সম্পর্কের ইতি টেনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চুক্তির মেয়াদে কার্ড সরবরাহ করতে না পেরে অতিরিক্ত ছয়মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও তা আমলে নেয়নি কমিশন। যদিও ফ্রান্সের ওই প্রতিষ্ঠানটি শর্ত লঙ্ঘনের জন্য দেশীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটিকেই দায়ী করে ইসির কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিল।
ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি। আগামীতে কমিশন দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় স্মার্টকার্ড তৈরি করবে।
ইসি সূত্র জানায়, আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস প্রকল্পের আওতায় ওটি স্মার্টকার্ড সরবরাহের কাজ পেয়েছিল। ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ৮১৬ কোটি টাকার চুক্তি করে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৯ কোটি স্মার্টকার্ড উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা পর্যায়ে মাত্র এক কোটি ৯৮ লাখ (১২ দশমিক ২০ শতাংশ) কার্ড পৌঁছাতে পেরেছে। এখনো ব্ল্যাঙ্ক (ফাঁকা) কার্ড আসেনি দুই কোটি ৩৬ লাখ চার হাজার। এ পর্যন্ত ৫১ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিল নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কমবেশি আরও ৩০ মিলিয়ন ডলার তাদের পাওনা রয়েছে।
জানা যায়, স্মার্টকার্ড দেওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র ছাপানো হবে। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে একাধিক নমুনা কার্ডও ইসিকে সরবরাহ করেছে।
সূত্র জানায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি বাড়াতে ওটি ইসির কাছে প্রস্তাব করে। এক্ষেত্রে ইসি কিছু শর্ত দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আর্থিক ক্ষতিসহ তাদের ব্যর্থতার বিষয়টি দাফতরিকভাবে মেনে নিতে হবে, নতুন আটটি মেশিন পূর্ণ কার্যকারিতাসহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩০ জুনের মধ্যে আনতে হবে। প্রযোজ্য খরচ তাদের বহন করতে হবে। দাফতরিকভাবে স্মার্টকার্ড প্যাকেজ বাস্তবায়নের পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু এসব শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। ৩ জুলাই ইসি সচিবকে দেওয়া এক চিঠিতে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ চুক্তি বাড়ানো বা শেষ করার বিষয়ে জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে।
বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্স একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালের জুলাইয়ে ৯ কোটি ভোটারকে স্মার্টকার্ড দেওয়ার চুক্তি সই হয়। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাইয়ে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। পাঁচবছর ব্যাপী প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে।
তবে জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড প্রদান ও বিতরণ প্রকল্পের মেয়াদ ১৮ মাস বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে মূল প্রকল্প আইডিইএর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ওই সময়ের পর এ প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়বে না বলে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন