নওগাঁয় ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক! রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলা সদরের নজিপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদলের নবগঠিত আংশিক কমিটিতে একজন সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়ায় ছাত্রদলের ভেতরে ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, মোস্তাফিজুর রহমান চাঁদ নামের এই ব্যক্তি ছাত্রলীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী দাবি করেছেন, নবগঠিত কমিটির এই গুরুত্বপূর্ণ পদে মোস্তাফিজুরের অন্তর্ভুক্তি দলের আদর্শ ও নীতির সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ছবি ও ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মোস্তাফিজুর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছেন।

ঘটনার পর থেকে ছাত্রদলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিবাদ জানান এবং সেইসব পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ওয়ালে। বিষয়টি নজরে আসে রাজনৈতিক অঙ্গনেরও। বিএনপি ও ছাত্রদলের একাংশ ছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী এবং এনসিপির ছাত্র প্রতিনিধিরাও এই নিযুক্তের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।

তাদের অভিযোগ, ছাত্রদলের অভ্যন্তরে একটি দুষ্টুচক্র আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক কর্মীদের পুনর্বাসনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে, যা বিএনপি ও ছাত্রদলের আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।

নজিপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদল ফেসবুক আইডি থেকে সোমবার দুপুরে দাবি করে যা লেখা হয় তা হবুহু তুলে ধরা হলো :

জেলা থেকে অনুমোদন করা নজিপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদলের কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক- সাংগঠনিক সম্পাদকের ৫ আগষ্টের আগের কোন আন্দোলনের ছবি কেউ দেখাতে পারলে কমেন্ট করবেন দয়া করে। কমিটির দায়িত্ব পাওয়া কাউকে ৫ তারিখের পরও কলেজের ব্যানারে কর্মসূচি করতে দেখি নি,তারা কোনদিন দলকে নিয়ে ফেসবুকেও পোষ্ট করেনি, ওরা কেমনে নেতা হইলো? এছাড়া এর পূর্বের একটি পোষ্টে

এদিকে কমিটি দেওয়ার প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ব্যাখ্যা দেওয়ার কঠোর বার্তা দিয়ে শোকজ করা হয়েছে জেলা ছাত্রদলের সহ প্রচার সম্পাদক ও পত্নীতলা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব কে।

অনুসারীরা বলছে, জেলার বিভিন্ন কলেজের কমিটি নিয়ে যে তামাশা করা হয়েছে তা ধামাচাপা দিতে কারাবন্দি ও বারবার নির্যাতিত নেতা রাকিবুল ভাইকে শোকজ করে একটা ভয়ের রাজ্য কায়েম করছে বর্তমান জেলা ছাত্রদল কর্মকর্তারা।

ছাত্রদলের এ কমিটি দেওয়া নিয়ে সাধারণ নেটিজেনরাও হাস্যরসাত্মক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিষয়টিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘টক অব দ্য টাউন’-এ পরিণত করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মিম ও ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া হোসেন জাকির বলেন, “কলেজ শাখার কমিটিগুলো কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। আমরা শুধু অনুমোদন দিয়েছি।”

তবে বর্তমান বিতর্ক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, “আমি কেবল আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম।”

ভবিষ্যতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে জাকারিয়া বলেন, “আমরা এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।