নওগাঁয় প্রশাসকের তৎপরতায় সরকারি সেবা সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ

গত বছর ৫ আগস্টের পর নওগাঁ জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল। তিনি ডিসি হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হয়রানি ও বিড়ম্বনা মুক্ত সেবা প্রাপ্তির লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে নতুন ভাবে বিনির্মাণ করার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক।
তিনি জেলা প্রশাসনের প্রতিটি দপ্তর বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ ও ভূমি অফিসগুলোকে সাধারণ মানুষদের জন্য নিরাপদ, হয়রানি ও ভোগান্তি মুক্ত করার কাজ শুরু করেন। সরকারি নিত্য কর্ম পরিকল্পনার বাহিরে হঠাৎ করে বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিস পরিদর্শন করে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষদের সমস্যার কথা শোনা ও সেই সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান করে দেয়া এবং ভূমি সেবা সম্পর্কে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের সচেতন করার চেষ্টা করে আসছেন জেলা প্রশাসক।
এমন কর্মকাণ্ডে ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোর সেবা প্রদানের দৃশ্যপট কিছুটা হলেও বদলে গেছে। ডিসির এমন কার্যক্রম জেলাজুড়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়াচ্ছে।
একজন ডিসির এমন কর্ম তৎপরতা জেলার বিভিন্ন সরকারি অফিসকে হয়রানিমুক্ত, দুর্নীতি মুক্ত, ভোগান্তিহীন, দুর্ভোগহীন ও নিরাপদ করতে এবং সাধারণ মানুষদের মাঝে সরকারি সেবাপ্রাপ্তি সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছেন নওগাঁ বাসী।
ঘুষ আর বিড়ম্বনার আখড়া এমন রেওয়াজ ও দুর্নাম থেকে জেলার ভূমি অফিস গুলোকে মুক্ত করতে এবং ১১টি উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিস গুলোর কাজে স্বচ্ছতা ফিরে আনতে, হয়রানী মুক্ত সেবা প্রদান ও কাজের গতিশীলতা ফেরাতে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাপক রদবদল করেন।
বছরের শুরুতেই এক অফিস আদেশের মাধ্যমে ৩১জন ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারি কর্মকর্তাকে একযোগে জেলার ১১টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলি/পদায়ন করা হয়। ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোয় অনেক বছর পর এই রকম বড় ধরনের রদবদল করায় জেলা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানায় নওগাঁর সচেতন মহল।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসক জেলার আত্রাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত মনিয়ারি ইউনিয়ন ভূমি অফিস পরিদর্শন করে অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেন ‘এখানকার সেবা প্রার্থীরা তাদের সেবা সম্পর্কে বিন্দুবিসর্গ অবগত নয়। তারা দীর্ঘদিন ভূমির খাজনা পরিশোধ করছেন না। তারা অনলাইনের কোন সেবা সম্পর্কেই অবগত নয়।
প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় এই এলাকায় কম্পিউটারের দোকান কিংবা ইউডিসি সেবাও সহজলভ্য নয়। ফলে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তাই তাদের একমাত্র ভরসা। তাৎক্ষণিক পরিদর্শনকালে আমি সেবা প্রত্যাশীদের সাথে বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করি” জেলার ধামইরহাট উপজেলার ৪নং আকবরপুর ইউনিয়ন পরিষদ হঠাৎ পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক।
পরির্দশন শেষে তিনি ফেসবুক পেজে লিখেন “এখানে সেবা প্রদানে অহেতুক গড়িমসি সেবা প্রত্যাশীদের অপেক্ষমান স্থানে কোন নাগরিক সুবিধা না থাকা এবং গ্রাম আদালতের কক্ষ গুদাম ঘর বানিয়ে রাখায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের গাফিলতি পরিলক্ষিত হয় অনতিবিলম্বে এসব ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণসহ সেবা প্রধানের ক্ষেত্রে আরো তৎপর হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়”।
নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও কলেজ শিক্ষক মো. বেলায়েত হোসেন জানান, জেলা প্রশাসক হচ্ছেন একটি জেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি যখন ইউনিয়ন পর্যায়ের কোন সরকারি অফিসে হঠাৎ করে যাবেন এবং অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষদের সঙ্গে আলাপ করবেন তখন নিশ্চয় ওই অফিসের সকল কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে ও স্বচ্ছতার সৃষ্টি হবে।
অপরদিকে, সরকারি কর্মকর্তা নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মাঝে যে ভীতির কাজ করে তাও দূর হবে। এছাড়া সরকারি অফিসগুলো থেকে সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সেবাগ্রহিতাদের যে নেতিবাচক ধারণা থাকে সেটিও দূর হবে। এমন খবর অন্যান্য অফিসে যখনই ছড়িয়ে পড়বে তখন সকলেই ডিসির হঠাৎ আগমনকে ঘিরে তটস্থ অবস্থায় থাকবে।
আর জেলা প্রশাসকের এমন ঝটিকা কার্যক্রমের কারণে নওগাঁর প্রতিটি সরকারি অফিসে সেবা প্রদানের দৃশ্যপটও বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নওগাঁ জেলা প্রশাসক মহোদয়ের এমন ঝটিকা কর্ম তৎপরতা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান সরকারি সেবাকে সহজিকরণ করতে সরকারের যে উদ্যোগ সেটি অনেক সেবা গ্রহীতাই জানেন না।
যার ফলে অহেতুক সরকারি অফিসগুলোতে গিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে জিম্মি হয়ে যায়। তাই একে অপরকে দোষারোপ না করে নিজের অধিকার সম্পর্কে জানি এবং অন্যকে জানতে উৎসাহিত করি। বাঁচতে হলে জানতে হবে এবং অন্যদের জানাতে হবে। নাগরিক সেবা তদারকি করার জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে তাৎক্ষণিক পরিদর্শন এবং সেবা গ্রহীতাদের সাথে সেবা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরো জানান যতদিন তিনি নওগাঁর ডিসি হিসেবে নিযুক্ত আছেন ততদিন সাধ্যের মধ্যে থেকে তিনি ভূমি অফিসের সেবাদান কার্যক্রমকে প্রতিটি মানুষের দৌরগড়ায় স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাবেন। এছাড়া তিনি সরকারি যে কোন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যৌক্তিক অভিযোগ পেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
কাজের মাধ্যমে নওগাঁবাসী যেন ডিসি হিসেবে নয় একজন সেবক হিসেবে আউয়ালকে মনে রাখেন এবং দোয়া করেন এমন কৃতিত্ব রেখে যেতে নওগাঁর সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন