নওগাঁর পত্মীতলায় স্কুল থাকলেও নেই যাতায়াতের রাস্তা!

নওগাঁর পত্মীতলায় স্কুল আছে কিন্তু যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পত্মীতলা উপজেলার নজিপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড নাদৌড় গ্রামের শেখ রাসেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়টি ২০১২ সালে স্থাপিত হয় । কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে কোমলমতি শিশুদের যাতায়াতের জন্য এখন পর্যন্ত কোন রাস্তা তৈরী হয়নি। গ্রামের সরু আইল’ই যাতায়াতে একমাত্র ভরসা।

বিদ্যালয়ের তিন পাশে ধান ক্ষেত এবং এর পাশেই রয়েছে একটি পুকুর আর সেই পুকুরের পাশ দিয়ে সরু চিকন আইল রাস্তা সেটাও পুকুর গর্ভে বিলীনের পথে। বিদ্যালয়ে প্রবেশে রাস্তা না থাকায় শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমন অবস্থার সৃষ্টি হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। একটি কালভার্ট থাকলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।

বর্ষা মৌসুমে পুকুরটি যখন পানিতে ভরে যায় তখন কোন উপায় থাকেনা। মাঝে মধ্যেই ঘটে দূর্ঘটনা।সরু রাস্তা হওয়ার কারণে ওই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনেক সময় পুকুরে পড়ে গিয়ে কাপড়, বই-পত্র ভিজিয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। এমতাবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও বছরের পর বছর ধরে সেই ভোগান্তি নিয়েই চলে আসছে শিক্ষালাভের প্রক্রিয়া।

বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্র এখলাসের মা শিউলি বেগম বলেন, রাস্তা না-থাকার কারনে বাচ্চারা একা একা স্কুলে যেতে চায় না। বাচ্চাকে স্কুলে পাঠিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকি পুকুরে পড়ে যায় কি’না, এ জন্য স্কুলে এসে বসে থাকতে হয় এতে সংসারের কাজের ক্ষতি হয়।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু আফতাব বলেন, রাস্তা না থাকায় অনেক ভোগান্তি হয়;স্কুলে ছাত্রছাত্রী আসতে চায় না, অভিভাবকরা বাচ্চাদের দিতে চান না, ইতিমধ্যে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই অন্য স্কুলে চলে গেছে। বর্ষা মওসুমে আরো বেশী সমস্যা হয় জমির আইল দিয়ে আসতে পাশে পুকুরে পরে বইখাতা ভেজে যাওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। অনেক শিক্ষক ও পোষ্টিং নিতে চান না। প্রায় ১ শ ছাত্রছাত্রী নিয়ে বিদ্যালয় শুরু হলেও এখন ৬১ জন আছে। রাস্তা না থাকার কারনে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো কিছু উন্নয়ন ও হচ্ছে না শ্রেণী কক্ষের ঘাটতি আছে। তাই রাস্তাটি তৈরী করবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি, রাস্তাটি হলে তা এলাকার শিক্ষা বিস্তারে সহায়ক হবে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বিমল বাবু বলেন, গ্রামীণ পাকা সড়ক থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় অর্ধ কিঃমি রাস্তাটি না থাকার কারনে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা । শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এমন দুর্ভোগ পোহালেও বারবার জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিচ্ছেন না। এ কারণে দিন দিন ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী কমে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাদেক উদ্দীন বলেন, রাস্তার বিষয়টি তাদের মাথায় আছে, এমপি মহোদয়কে বলে বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হবে।
পতœীতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল গাফ্ফার বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন। এর আগে একজন সুহৃদ ব্যক্তি ওই বিদ্যালয়ের জন্য জমি দান করেছেন, পরবর্তীতে সেখানে রাস্তার জন্য কেউ জমি দিতে না চাওয়ায় কাজটি থমকে আছে। জমি দিতে রাজি হলে তিনি ব্যক্তিগত খরচে হলেও রাস্তাটি তৈরী করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় নওগাঁ-২ আসনের সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকার -এর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ” স্কুল কানেকটিং রোড ” নামক একটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, দেশের যেসব স্কুলে এক কি:মি এর কম দ‚রত্বের এমন রাস্তার প্রস্তাবনা রয়েছে পর্যায়ক্রমে সবগুলোই এ প্রকল্পের আওতায় আসবে।