নতুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতার তালিকার দ্বিতীয় নম্বরে থাকা সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
শুক্রবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ আদেশে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গভবনের মুখপাত্র মো. জয়নাল আবেদীন। তিনি জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় নতুন প্রধান বিচারপতিকে শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বঙ্গভবনে গেলে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি করার সিদ্ধান্তের কথা রাষ্ট্রপতি তাদের জানান বলে জানা যায়। যদিও সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে পরামর্শ করতে বাধ্য নন রাষ্ট্রপতি।
সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে পাস করা সৈয়দ মাহমুদ হোসেন জীবনের শুরুতে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হন।
২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের শেষ বছরে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান মাহমুদ আলী।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার দুই বছর পর ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মাহমুদ হোসেন আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর তার অবসরে যাওয়ার সময় নির্ধারিত আছে।
মাহমুদ হোসেন এর আগেও আলোচনায় এসেছিলেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি সে সার্চ কমিটি গঠন করা হয় তার প্রধান ছিলেন তিনি। ২০১২ সালেও কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে গঠন করা নির্বাচন কমিশন বাছাইয়ের জন্য গঠন করা সার্চ কমিটিরও প্রধান ছিলেন তিনি।
মাহমুদ হোসেন আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠতার ক্রমে দ্বিতীয় নম্বরে থাকলেও তার মেয়াদ আছে আরও প্রায় তিন বছর। অন্য দিকে জ্যেষ্ঠতম ও বিচারক ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়া অবসরে যাবেন আগামী ১০ নভেম্বর। ফলে তাকে নিয়োগ দিলে চলতি বছর আবার নতুন কাউকে বেছে নিতে হতো রাষ্ট্রপতিকে।
রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রথমে আপিল বিভাগের যে বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন, তার ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে তা আইন মন্ত্রণালয়কে জানান। এর পর মন্ত্রণালয় থেকে ওই বিচারপতির ব্যাপারে ফাইল প্রস্তুত করে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠান। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পর বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর প্রধান বিচারপতি নিয়োগের গেজেট জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গত ১০ নভেম্বব পদত্যাগ করার প্রায় দেড় মাস আগেই তিনি ছুটিতে যান। আর তার ছুটির আবেদন করার পর ১ অক্টোবর থেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়া।
১৩ অক্টোবর এক মাসের জন্য বিদেশে যাওয়া সিহনার দেশে ফেরার কথা ছিল ১০ নভেম্বর। কিন্তু সেদিন তিনি না ফিরে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গত ১৪ নভেম্বর সেই পদত্যাগপত্র অনুমোদন করলেও সেটি কার্যকর হয় আর পদত্যাগপত্রে সই করার তারিখ থেকেই। সেই থেকে প্রধান বিচারপতির পদটি শূন্য আছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও এতদিন পদটি শূন্য থাকেনি।
এর আগে একবার ১৩ দিন দেরিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার নজির আছে। সেটি হয়েছিল ১৯৯০ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে। ১৯৯০ সালের ১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী অবসরে যান। এরপর ১৪ জানুয়ারি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
অবশ্য সংবিধানে প্রধান বিচারপতি অবসরে গেলে বা পদত্যাগ করলে কতদিনের মধ্যে নিয়োগ দিতে হবে তার কোনো উল্লেখ নেই।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন