বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে

নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করবে পশ্চিমারা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়কে আমলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো পশ্চিমা শক্তিগুলো। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জেফরি ম্যাকডোনাল্ড এক এক্স বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ায় চারটি বিষয় থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো আওয়ামী লীগের জয়কে স্বীকার, নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সমালোচনা, সহিংসতার নিন্দা এবং অব্যাহত অংশীদারি এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে আমার পর্যবেক্ষণ হলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে ঢাকার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নীতি অপরিহার্যভাবে অব্যাহত থাকবে। তবে এর পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারি আরো জোরালো করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার গত সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ এবং গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র দেখেছে, গত ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন জিতেছে আওয়ামী লীগ।

ম্যাথু মিলার বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের কয়েক হাজার সদস্যের গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন নানা অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু ছিল না—অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও এই মত পোষণ করে। সব দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র দুঃখিত।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘নির্বাচনের দিন এবং এর আগের মাসগুলোতে সংঘটিত সহিংসতার নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতার প্রতিবেদন, বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং অপরাধীদের জবাবদিহি করতে উৎসাহিত করি। আমরা সব রাজনৈতিক দলকে সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানাই।’

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে ম্যাথু মিলার বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে, একটি উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নিতে, বাংলাদেশে মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজের সমর্থনে, জনগণের সঙ্গে জনগণের এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরো গভীর করতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিতে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ।’

সহযোগিতায় প্রস্তুত যুক্তরাজ্য

লন্ডনে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন দপ্তরের মুখপাত্র গত সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে যুক্তরাজ্য অবগত আছে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ওপর।

 

ব্রিটিশ মুখপাত্র বলেন, ‘নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। কাজেই বাংলাদেশের জনগণের হাতে ভোট প্রদানের জন্য সব বিকল্প ছিল না।’

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক ও গভীর বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে টেকসই রাজনৈতিক সমঝোতা ও সক্রিয় নাগরিক সমাজ গড়ে তোলার পরিবেশ তৈরি করা অপরিহার্য।

মুখপাত্র আরো বলেন, ‘আমরা আশা করি, সব রাজনৈতিক দল তাদের মতভিন্নতাকে পাশে রেখে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে এক হয়ে কাজ করবে। আমরা এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে সব সময় প্রস্তুত।’

অংশীদারি পুনর্ব্যক্ত করেছে ইইউ

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গতকাল মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ইইউ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের ভিত্তিতে ইইউ-বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারি পুনর্ব্যক্ত করেছে। নির্বাচনে বড় সব দল অংশ না নেওয়ায় ইইউ দুঃখিত।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইইউ তার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মিশনের আসন্ন প্রতিবেদন ও সুপারিশগুলো প্রকাশ করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সমঝোতাকে স্বাগত জানায়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির একই চেতনা থেকে ইইউ নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ সময়মতো এবং পূর্ণ তদন্ত নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানায়।

ইইউ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ইইউ নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানায়। আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, যথাযথ প্রক্রিয়া এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে এ সময় এবং তার পরেও সম্মান করা এবং সমুন্নত রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বিরোধী ব্যক্তিদের আটক অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

ইইউয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক বহুত্ববাদ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানকে সম্মান করতে এবং শান্তিপূর্ণ সংলাপে সম্পৃক্ত হতে ইইউ সব অংশীদারকে জোরালোভাবে উৎসাহিত করে। গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর ‘সেন্সরশিপ’ বা প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ গুরুত্বপূর্ণ।

ইইউ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ‘জিএসপি প্লাস’ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা পাওয়াসহ রাজনৈতিক, মানবাধিকার, বাণিজ্য ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ককে চিহ্নিত করে এমন অগ্রাধিকার নিয়ে ইইউ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।”

নতুন সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সমর্থন দেবে চীন

নতুন সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে আইন অনুযায়ী বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং মঙ্গলবার বেইজিংয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় চীন বাংলাদেশকে এবং নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় আওয়ামী লীগকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বাংলাদেশের বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে চীন সে দেশের (বাংলাদেশের) নির্বাচনের পর তার আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দেবে।’

মানবাধিকার, আইনের শাসনে তাগিদ জাতিসংঘের

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সহযোগী মুখপাত্র ফ্লোরেন্সিয়া সোতো নিনো গত সোমবার রাতে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে তাঁরা নজর রাখছেন। নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের সময় সহিংসতার ঘটনার খবরে জাতিসংঘ মহাসচিব স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন। তিনি সব পক্ষকে সব ধরনের সহিংসতা পরিহার করতে বলেছেন।