নরসিংদী কোন স্বতন্ত্র মতন্ত্র আমরা চিনি না, মাইরের ওপর কোন ওষধ নাই – রিমন
কোন স্বতন্ত্র মতন্ত্র আমরা চিনি না, মাইরের ওপর কোন ওষধ নাই। ছাত্রলীগের কোন পোলাপান স্বতন্ত্ররে মানতো না। স্বতন্ত্ররে কেমনে পিডাইতে অয়, হে অই দেহায়সে, হেরে আমরা এমনেই পিডামু। এই শহরের, এই সদরের কোন এলাকায় তাদেরকে (স্বতন্ত্র প্রার্থী) কোন জায়গা দেয়া যাবে না। তারা নৌকার বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, তারা দেশ বিরোধী।
নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমনের দেয়া এমন বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী সদর ১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নজরল ইসলাম হিরর নৌকা প্রতিককে বিজয়ের লক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এমন বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রিমন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে শহরের বাসাইলস্থ নরসিংদী ক্লাব লি: এ অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি জিএম তালেব হোসেন। এসময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরল ইসলাম হির, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনির হোসেন ভুইয়া, নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভুইয়া, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালিব পাঠান, আওয়ামী লীগ নেতা আমিরল ইসলাম ভুইয়া, মোন্তাজ উদ্দিন ভুইয়া, এস.এম কাইয়ুমসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী স্বতন্ত্র নির্বাচন করার অনুমতি দেয়ার পরও ছাত্রলীগ সভাপতির এমন হুমকিমূলক বক্তব্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে শুর হয়েছে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা।
জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি সাব্বির আহমেদ শিবলী বলেন, এমন বক্তব্যে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিব্রতবোধ করছেন। আমরা এমন বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছি। বিষয়টি কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সভাপতিকে অবহিত করা হয়েছে। কেন্দ্রিয় নির্দেশনা মোতাবেক ছাত্রলীগ কাজ করবে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন বলেন, আমার বক্তব্য হচ্ছে দলীয় যারা নৌকার বিরদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে, আমি মনে করি তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরদ্ধে তারা অবস্থান করতেছে। আমি তাদের বিরদ্ধে হুশিয়ারি দিয়েছি, আমার জেলা ছাত্রলীগ তাদের বাধাগ্রস্ত করবে। নৌকাকে পাস করানোর জন্য যা যা করার দরকার তাই করবো। প্রধানমন্ত্রী যে বলছে দলীয় লোক স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবে এমন অথেনটিক কোন নিউজ আমি দেখি নাই।
এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এমন বক্তব্যের সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। আমি পরে গিয়েছি ওই সভায়।
ছাত্রলীগ নেতার বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে অনেকে অনেক বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা লিডাররা গ্রহণযোগ্য বক্তব্য দিয়েছি, এখন পোলাপান মানুষ কোথায় কীভাবে বক্তব্য দিসে, সেটা উল্লেখ করে পত্রপত্রিকায় দেয়া ঠিক না বলে আমি মনে করি। এমন বক্তব্য আমরা সমর্থন করি না। আমরা সমঝোতায় নির্বাচন করতে চাই। নৌকার জয় ঘটাবো সকলকে কাছে নিয়ে। সকলের প্রতি আহবান সকলে যেন নৌকার মিছিলে আসে। নৌকাকে আক্রান্ত করে ডামি প্রার্থী বিজয় লাভ করক, সেটা আমরাও চাই না, প্রধানমন্ত্রীও চান না।
এ বিষয়ে জানতে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ আলী ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নজরল ইসলাম হির ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ড. বদিউল আলম বলেন, “নির্বাচনী আচরণ পরের বিষয়, স্বাভাবিকভাবে কেউ কাউকে পেটানোর হুমকি দিলেই সেটা ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। যে প্রার্থীকে হুমকি দিয়েছেন, সে যদি পুলিশে লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদি ভুক্তভোগী প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ কোনো প্রার্থীকে হুমকি দিলে সেটা নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্গিত হবে। তবে, আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি।”
উল্লেখ্য, নরসিংদী সদর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাবেক পৌর মেয়র কামরজ্জামান প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন