নরসিংদীতে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে অফিসে কর্মরত কর্মচারী-আনসার সদস্যসহ বড় কর্তার প্রতি মাসে অবৈধ আয় প্রায় কোটি টাকা। ফলে আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন গড়ে তিনশত আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে বেশির ভাগ আবেদন জমা হয় ‘ঘুষ চ্যানেলে’। আবেদনপ্রতি ন্যূনতম ঘুষ নেওয়া হয় ৩ হাজার টাকা। এ হিসাবে দৈনিক ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় দেনপক্ষে ৯ লাখ টাকা। মাসে আসে ২ কোটি ৭০ লাখ।

এসব ঘুষ লেনদেনের বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ এবং মোবাইল কল রেকর্ড রয়েছে এই সংবাদকর্মী রুদ্র এর হাতে। গত ১৪ মার্চ রায়পুরা উপজেলা থেকে আসা এক ব্যক্তির কাছে ১ হাজার ৪শ টাকা ঘুষ নিয়েছেন নরসিংদী পাসপোর্ট অফিসের ২য় তলায় থাকা এক আনসার সদস্য।

এদিকে গত ২৮ ইং ফেব্রুয়ারী নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার  মরজাল এলাকার মোঃ হাবিব খান একটি জি.ডি এর পাসপোর্ট জমা দিতে গেলে তার কাছ থেকে ২য় তলায় থাকা এক আনসার সদস্য চ্যানেল ফি বাবদ ১৫ শত টাকা নেয়। এ বিষয়ে সংবাদকর্মী রুদ্র তার নিকট জানতে চাইলে, তিনি কোন কিছু না বলে দ্রুত নিচে চলে যায়। এছাড়া ঐ দিন আরেক আনসার সদস্য এক ব্যক্তির ৫ বছর মেয়াদী দুটি পাসপোর্ট করে দেওয়ার বিনিময়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ দাবি করেন ১৫ হাজার টাকা। ঠিক এভাবেই প্রতিনিয়তই ঘুষ বাণিজ্য চলছে নরসিংদী পাসপোর্ট অফিসে। তবে আনসারদের দাবি এসব টাকার ভাগ দিতে হয় ওপর মহলে।

এ অফিসের বাহিরের চিত্র আরও ভয়াবহ। আশপাশের কিছু অনলাইন ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি বসে থাকে ফাঁদ পেতে। অসহায় মানুষদের পকেট কাটেন ইচ্ছে মত।

পাসপোর্ট অফিসে আসা প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ৪৮ পাতা বিশিষ্ট ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করে থাকেন। ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার একটি সাধারন ই-পাসপোর্টে সরকারি ফি বাবদ ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হয় ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি হলে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার একটি সাধারন ই-পাসপোর্টের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হয় ৫ হাজার ৭৫০ টাকা এবং জরুরি হলে ৮ হাজার ৫০ টাকা।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, একটি পাসপোর্টের জন্য একজন গ্রাহককে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার একটি সাধারন ই-পাসপোর্টে ঘুষসহ তাকে দিতে হবে ৭ থেকে ৮ হাজার, জরুরি হলে দিতে হবে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার একটি সাধারন ই-পাসপোর্টের জন্য সাড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার ও জরুরি হলে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা।

এই নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতির ৭ পর্বের মধ্যে ১ম পর্বেই বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আরো চাঞ্চল্যকর তথ পেতে বাকি পর্বগুলোতে চোখ রাখুন।

তাদের দুর্নীতির কৌশলের কারণে পাসপোর্টের আবেদনকারীদের ভোগান্তির শেষ নেই। সপ্তাহে ঘুরে মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। জরুরি পাসপোর্ট পেতেও অপেক্ষা করতে হয় কয়েক সপ্তাহ।

পাসপোর্টের জন্য যারা সরাসরি আবেদন জমা দেন সেগুলোকে পাসপোর্ট অফিসে বলা হয় পাবলিক ফাইল। আর যারা কারও মাধ্যমে আবেদন জমা দেন সেগুলোকে বলা হয় চ্যানেলের ফাইল। সরাসরি জমাদানকারীদের আবেদনপত্র নিয়ে চক্রগুলো অবাধে নগদ বাণিজ্য করছে।

জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতি দিন শত শত আবেদনকারীরা পাসপোর্ট করতে এসে পড়ে যান গোলক ধাঁধার মধ্যে। অফিসের বাইরে গেইটের সামনে উৎ পেতে থাকা প্রতারক ও দালাল চক্রের খপ্পর এড়াতে অফিসের যে কারও কাছে পাসপোর্ট করার তথ্য জানতে গেলে সেও পরামর্শ দেয় নির্ধারিত ‘চ্যানেল ফি’ দিয়ে পাসপোর্ট করার। চ্যানেল ফি ছাড়া গ্রাহক নিজ উদ্যোগে লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার চেষ্টা করলে তার আবেদনে নানাবিধ সমস্যা সহ ভুল দেখিয়ে দিনের পর দিন ফেরৎ দেওয়া হয়।

তবে নির্ধারিত চ্যানেলের টাকাসহ আবেদনপত্র জমাদিলে তা সঙ্গে সঙ্গে জমা নিয়ে আঙ্গলের ছাপ ও ছবি করে দেওয়া হয় মূহুর্তে। এভাবেই প্রত্যেক গ্রাহককে ভোগান্তি এড়াতে নির্ধারিত ব্যাংক ফি বাদে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিয়ে পাসপোর্ট করতে হয়।

এ ব্যাপারে নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি-পরিচালক মানিক চন্দ্র দেবনাথ এর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি নয়। সংবাদকর্মীদের অবস্থান টের পেয়ে তিনি দ্রুত অফিসের অন্যান্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলেন।