নারায়ণগঞ্জে অগ্নিকাণ্ড : কোনো মরদেহ শনাক্ত হয়নি, প্রয়োজন ডিএনএ টেস্ট
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ’র সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৫ জনে দাঁড়িয়েছে। লাশগুলো উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, উদ্ধারের পর কোনো লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। যে কারণে ডিএনএ টেস্ট প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদরা তাকে প্রশ্ন করলে এ কথা বলেন সুভাষ চন্দ্র। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে যে কয়টি মরদেহ আনা হয়েছে, তাদের পরিচয় মেলেনি। আমাদের প্রথম কাজটি হবে মরদেহগুলোর যথাযথ প্রক্রিয়ায় ডিএনএ টেস্ট করে শনাক্ত করা। তিনি আরও বলেন, সবগুলো মরদেহ আগুনে পুড়ে ঝলছে গেছে। প্রয়োজনে তাদের মরদেহ ফ্রিজিং করা হবে। আত্মীদের সঙ্গে ডিএনএ সিম্পল মিলিয়ে পরবর্তীতে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, গতকাল আহত অবস্থায় একজনকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দ্রুত মরদেহ শনাক্তের চেষ্টা চলছে। চিকিৎসকের মাধ্যমে মরদেহগুলো শনাক্ত করা হবে।
অগ্নিকাণ্ড ও এর কারণে হতাহতের ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা প্রশ্নের উত্তরে সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, মামলা এখনও হয়নি, প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে, সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের মৃত্যুর খবর জানান নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্মণ। আজ শুক্রবার তিনি বলেন, ৫২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। ঘটনার পর হাসপাতালে পাঠানো আহতদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেকে পাঠানো হয়েছে।
দেবাশীষ বর্মণ আরও জানান, রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ’র সেজান জুস কারখানা ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় উদ্ধারকাজ শুরু হবে। তালাবদ্ধ থাকায় চতুর্থ তলার কোনো শ্রমিক বের হতে পারেননি। যে কারণে সেখানেই তাদের মৃত্যু হয় বলে জানান নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক।
শুক্রবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন নিভলেও ভবন থেকে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।
এর আগে দুপুরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন বলেন, ‘চারটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আমরা ৪৯ জনের মৃতদেহ পাঠিয়েছি। আমরা চতুর্থ তলা পর্যন্ত যেতে পেরেছি। আমাদের কাজ শেষ হয়নি। চূড়ান্ত সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ নুসরাত বলেন, ‘অনেক লাশ শনাক্ত করার মতো অবস্থায় নেই। সেগুলো ঢাকা মেডিকেলের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য বলা হবে।’ এদিকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের ১০ হাজার টাকা করে অনুদানের ঘোষণা করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় সেজান জুস, কোমল পানীয় ও বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তৈরির ওই কারখানায় আগুন লাগে। এরপর গতকাল রাতেই তিনজনের মৃত্যুর খবর জানায় স্থানীয় প্রশাসন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন