নিজের ‘স্বাভাবিক’ ব্যাটিংয়েই ইমনের প্রথম ফিফটি
আসরের উদ্বোধনী ম্যাচেই বিস্ময় জাগিয়েছিলেন, মুখোমুখি প্রথম দুই বলে হাঁকিয়েছিলেন বাউন্ডারি। সেদিন খেলেন ২৩ বলে ৩৫ রানের ইনিংস। যা দলকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেয়। তার সাহসী ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন কোচ থেকে শুরু করে দলের সবাই। এমনকি আগ্রাসী মনোভাব নজর কেড়েছিল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনেরও।
বলা হচ্ছে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর ডানহাতি ওপেনার ও মিডিয়াম পেসার আনিসুল ইসলাম ইমনের কথা। বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচেই চমক দিয়েছিলেন তিনি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ২০১৮-১৯ মৌসুমে খেললেও টিভির পর্দায় দেখানোর এটিই ইমনের প্রথম টুর্নামেন্ট। ফলে এবারই তাকে প্রথমবারের মতো দেখছেন অনেকে।
প্রথম ম্যাচে ২৩ বলে ৩৫ রানের ইনিংস দিয়ে শুরুর পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে যথাক্রমে ৫ বলে ২ ও ২৭ বলে ২৪ রান। বিশেষ করে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে উইকেটে সেট হওয়ার চেষ্টায় একটু বেশিই বল হজম করে ফেলেন। যা বাড়তি চাপ হয়ে আসে দলের ওপরেও।
তবে চতুর্থ ম্যাচেই আবার প্রথম ম্যাচের মতো আগ্রাসী চেহারায় ফিরে গেছেন রাজশাহীর এই ২৩ বছর বয়সী ওপেনার। যা তাকে এনে দিয়েছে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। বুধবার রাতে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিপক্ষে করেছেন ৪৪ বলে ৫৮ রান, ইনিংসে ছিল ৬ চারের সঙ্গে ১টি দৃষ্টিনন্দন ছয়ের মার।
মাঝের দুই ম্যাচে রান না পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটি খেলতে না পারার কথা। ম্যাচ শেষে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে ইমন বলেন, ‘আগের ম্যাচগুলোতে আমার স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারিনি। শেষ ম্যাচের (ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে) পর টিম ম্যানেজম্যান্ট থেকে বিশেষ করে হান্নান স্যার (টিম ম্যানেজার হান্নান সরকার), আমাকে বলেছেন নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে। (বুধবার) আমার স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে পেরেছি এবং পারফরম করতে পেরেছি।’
তবে ইমন ফিফটি করলেও শেষপর্যন্ত ম্যাচটি জিততে পারেনি রাজশাহী। ম্যাচের একদম শেষ বল পর্যন্ত লড়ে তারা হেরেছে মাত্র ১ রানের জন্য। চট্টগ্রামের করা ১৭৬ রানের জবাবে রাজশাহীর ইনিংস থেমেছে ১৭৫ রানে। ম্যাচের শেষ বলে যখন ৪ রানের প্রয়োজন ছিল, তখন শুধু ২ রান নিতেই সক্ষম হন রনি তালুকদার।
এত কাছে গিয়েও জয় মেলেনি, তবু খুব একটা খারাপ লাগা নেই ৪ ম্যাচে ২ জয়ে রাজশাহী শিবিরে। বরং দলের সবাই লড়াকু মানসিকতা দেখানোয় খুশি প্রকাশ করেছেন ইমন, ‘আসলে খারাপ লাগার কিছু নেই। আমরা যে দুইটা ম্যাচ হেরেছি, শেষপর্যন্ত লড়াই করেছি। কিন্তু জয়টা আসেনি, লড়াই করে হেরেছি। আল্লাহ্র রহমতে পরের ম্যাচগুলো ভালো করার এবং জেতার চেষ্টা থাকবে।’
রাজশাহীর হারের দায় খানিকটা নিজের কাঁধে নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাচটা ক্লোজ হবে তা বুঝতে পারছিলাম। তাই আমার ইচ্ছা ছিল ম্যাচটা শেষ করে আসার। যে কারণে ফিফটি করার পর একটু সময় নিচ্ছিলাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত জিতিয়ে আসতে পারিনি। তাই খারাপ লাগছে। তবে দল হিসেবে আমরা ভালো খেলেছি। আলহামদুলিল্লাহ্।’
মূলত পিঞ্চ হিটার হিসেবে রাজশাহী দলে সুযোগ পেলেও, বোলিংয়ের হাতটাও নেহায়েত মন্দ নয় ইমনের। প্রিমিয়ার লিগের ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৭ ইনিংসে নিয়েছিলেন ৬টি উইকেট। এর বাইরে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই প্রায় নিয়মিত বোলিং করে আসছেন তিনি। যা বুধবারের ম্যাচে কাজে লাগিয়েছেন রাজশাহী অধিনায়ক শান্ত।
চট্টগ্রামের রানের চাকা থামাতে ইমন মিডিয়াম পেস বোলিং ব্যবহার করেছেন রাজশাহী অধিনায়ক। যা কাজেও দিয়েছে বেশ, ইমনকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ৩টি ওভার। নিজের শেষ ওভারে ১টি ছক্কা ব্যতীত বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন ইমন, ৩ ওভারে ২২ রান খরচায় নিয়েছেন ১ উইকেট।
আলাপে ইমন জানিয়েছেন, ব্যাটিংয়ে নামার আগে উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বোলিং করাটা বেশ কাজে দিয়েছে, ‘প্রথম ইনিংসে বোলিং করায় বুঝতে পেরেছি উইকেটটা কেমন। বিশেষ করে বলের লেন্থ পিক করতে সহজ হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় ইনিংসে শিশিরের কারণে বাড়তি সুবিধাও ছিল। বল ভালোভাবে ব্যাটে আসছিল।’
দিনের প্রথম ম্যাচে দুই দলেরই রান করতে কষ্ট হয়। আগে ব্যাট করে মাত্র ১০৮ রান করে বরিশাল। যা তাড়া করতে ১৮.৫ ওভার খেলতে হয়েছে ঢাকার। একই উইকেটে চট্টগ্রাম দাঁড় করায় ১৭৬ রানের বড় সংগ্রহ। তবে এতে অবাক কিংবা বিচলিত হয়নি রাজশাহী, উইকেটের আচরণ পরিবর্তনটা ইতিবাচকভাবেই নিয়েছিল তারা।
অধিনায়ক শান্তর সঙ্গে উড়ন্ত সূচনার পর ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করে দলকে জয়ের কক্ষে রাখা ইমনের ভাষ্য, ‘চট্টগ্রাম যখন রান করছিল, তখন আমরা প্যানিকড হইনি, সবাই ইতিবাচক ছিলাম। যেহেতু শিশিরের প্রভাব আছে, তাই প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও রান হবে বুঝতে পারছিলাম আমরা।’
ওপেনিং সঙ্গী হিসেবে অধিনায়ক শান্তকে পাওয়াটা ইনিংস গড়ার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করছে বলে জানালেন ইমন। শরীফুল ইসলামের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে প্রথম তিনটি বল প্রায় একই জায়গায় ছিল, মিডল স্ট্যাম্পে পিচ করে বেরিয়ে যাচ্ছিল অফস্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে। প্রথম দুই বলে ক্রস ব্যাটে অনসাইডে খেলার চেষ্টা করেন ইমন, কিন্তু ফল হয়নি কিছুই।
তবে পরের বলটি নিজেকে সামলে নিয়ে আলতো ছোঁয়ায় খেলেন অফসাইডে, পেয়ে যান ১ রান। প্রথম দুই বলে ‘ভুল’ শট খেলার পর অধিনায়কের পরামর্শেই নিজেকে শুধরে নেন ইমন। সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অপরপ্রান্তে অধিনায়ক ছিলেন। প্রথম দুই বলে ব্যাটে-বলে করতে পারিনি। তখন আমাকে বলেছে যে, যেদিকের বল যেন সেদিকেই খেলি। তার কথায়ই মূলত ভুলটা শুধরে নিতে পেরেছি।’
কখনও জাতীয় পর্যায়ের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে খেলেননি ডানহাতি এ পেস বোলিং অলরাউন্ডার। প্রথম বিভাগ ক্রিকেট থেকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সুযোগ পেলেও, হাই পারফরম্যান্স ইউনিটে জায়গা করে নিতে পারেননি। ফলে তার ব্যাপারে জানা ছিল না অনেকেরই। এবারের বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে রাজশাহীর হয়ে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের পর বিসিবি প্রেসিডেন্টসহ আরও অনেকের নজরেই পড়েছেন তিনি।
ইমনের লক্ষ্য, ধারাবাহিক পারফরম করে দলের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনা। তাহলে বড় সাফল্য মিলবে বলে মনে করেন তিনি, ‘প্রথমত আল্লাহ্র দরবারে শুকরিয়া, বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ভালো কিছু করতে না পেরেও এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ্। ভাল লাগছে। তবে দলের জন্য ধারাবাহিক পারফরম করে যেতে চাই। পারফরম করতে থাকলে বড় সাফল্য আসবে ইনশাআল্লাহ্।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন