নির্বাচন কমিশনকে ওবায়দুল কাদেরের ধন্যবাদ
দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে দাবি করে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ওবায়দুল কাদের।
ভোটের পর দিন বুধবার বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।
আগের দিন আলোচিত এই নির্বাচনে বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে প্রায় ৬৮ হাজার ভোটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক।
বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্বাচনকে ভোট ডাকাতি ও নজিরবিহীন কারচুপি আখ্যা দিয়ে ভোটের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে।
তবে দলের প্রার্থী মঞ্জু ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৫টির বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে সেখানে নতুন করে ভোট নেয়ার দাবি করেছেন। তার অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগকে জেতাতে কাজ করেছে। আর প্রমাণ হয়েছে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়।
নির্বাচন কমিশনও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। তবে সার্বিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।
নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ জানিয়েছে তারা পর্যবেক্ষণ করেছে এমন ১৪৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩২ শতাংশ কেন্দ্রে ‘সামান্য’ গোলযোগের ঘটনা ঘটেছে। তবে তা নির্বাচনের ফলাফলকে পাল্টে দেয়ার মতো ছিল না।
কাদের তার সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, আওয়ামী লীগ যে উন্নয়ন করছে তাতে তাদের ভোট বেড়েছে। আর বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতিতে তাদের ভোট কমেছে।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘খুলনার জনগণের রায়কে যারা প্রত্যাখ্যান করেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।’
কাদের বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার, নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার, গ্রাম পুলিশ, পর্যবেক্ষক, প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার, অর্থাৎ নির্বাচন আয়োজন, পরিচালনায় যথযথ দায়িত্ব পালনের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন, ঐতিহ্যমণ্ডিত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
‘আমি খুলনা সিটি করপোরেশনের সব ভোটার, জনগণ বিশেষত নারী ও নতুন প্রজন্মের ভোটারদেরকেও শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
গণমাধ্যম কর্মী, বিজয়ী এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব প্রার্থীকেও শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান কাদের।
বিএনপি ভোটের প্রচার শুরুর পর থেকেই ‘জন্মগত স্বভাব অনুযায়ী’ ব্যাপক মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট এবং ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন কাদের।
বলেন, ‘গতকাল নির্বাচনের দিনও সকাল থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিএনপির নেতৃবৃন্দ নয়াপল্টনে মাইক্রোফোন দিয়ে লাগাতারভাবে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে উস্কানি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছে।’
‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার, মিথ্যাচার ও তীর্যক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত করার ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও এই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।’
‘গতকাল খুলনা নগরীকে এক উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। জনগণ স্বাধীনভাবে তাদর পছন্দসই প্রার্থীকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন। অতীতের ন্যায় কালোটাকা, ভোট কারচুপি ও পেশীশক্তির অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেনি খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন।’
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো খুলনাতেও আওয়ামী লীগের ভোট বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে দাবি করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, ‘বিশেষ করে তরুণ ও নারী ভোটাররা আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির ভোট কমেছে।’
‘বিএনপির নেতৃবৃন্দ বুঝতে পারেননি জনগণ এখন অনেক সচেতন। মিথ্যাচার, মিথ্যাচার ও ভীতি সঞ্চার করে জনগণের মন জয় করা যায় না। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলে তা আবার প্রমাণ হয়েছে।’
‘বিএনপির নেতৃবৃন্দের বুঝতে হবে এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী, অর্থপাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, লুটেরার দল বিএনপি ক্রমাগত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তাদের জন্য আরও বড় পরাজয়ের পরিণতি অপেক্ষা করছে।’
‘যেকোনো মূল্যে জিততে হবে এই ধরনের মানসিকতা এবং জিতলে আছি, হারলে নাই, এই ধরনের অপকৌশল’ থেকে বেরিয়ে আসতে বিএনপিকে অনুরোধ করে কাদের বলেন, ‘আসুন, সত্যকে মেনে নিতে শিখুন।’
বিএনপির অভিযোগ ‘হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূক্ত, ভিত্তিহীন, কল্পিত, কুৎসিত মিথ্যাচার’ করছে বলেও অভিযেগা করেন কাদের।
রাষ্ট্রপতি সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন জানিয়ে কাদের জানান, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই যথাসময়ে সংবিধান অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে জনগণের প্রতিও আহ্বান জানান কাদের।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আপিল বিভাগের জামিনের আদেশ নিয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন কাদের।
গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট বিএনপি নেত্রীকে যে জামিন দিয়েছে সেটি আজ বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। তবে অন্য মামলা থাকায় তিনি এখনও মুক্তি পাচ্ছেন না।
কাদের বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) যদি অন্য মামলা থাকে, তাকে তো সে মামলায়ও জামিন পেতে হবে। এটাই তো আইন। আইনগত প্রক্রিয়া শেষ না হলে সরকার তাকে কীভাবে মুক্তি দেবে?’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, দীপু মনি, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন