নির্বাচনী প্রচারণায় কেন এতো অসমতা আর পরিবর্তন?
বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রচারাভিযানের একেবারে শেষ পর্যায়ে আজ ঢাকায় বড় সমাবেশ এবং মিছিলের পরিকল্পনা ছিল প্রধান দুই নির্বাচনী জোটের।
কিন্তু একদিকে সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটও বড় নির্বাচনী মিছিল না করে স্থানীয় পর্যায়ে মিছিল-সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারাভিযান শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু বাংলাদেশে এই প্রথম কোন জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকায় বড় কোন নির্বাচনী সভা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দীন আহমদ আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবারে নির্বাচনী প্রচারাভিযানের বিভিন্ন পার্থক্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, সত্তরের পর থেকে সব নির্বাচনে যে জমজমাট উৎসবের ভাব থাকতো এবং ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থী- সমর্থকদের মাঠে সরব উপস্থিতি দেখা যেতো, এবারের চিত্রটা সে অনুযায়ী ব্যতিক্রম। কারণ মাঠে সরকারি দলের প্রচারণাটাই বেশি চোখে পড়ছে।
এদিকে বিরোধী দল বিশেষ করে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির প্রার্থীর কোন প্রচারণা বা পোস্টার নজরেই পড়ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি যে নির্বাচনী এলাকায় থাকি সেখানে বিরোধী দলের প্রার্থী কে, তার নামটাও অনেকে জানেনা। কারণ তার কোন পোস্টার নেই।”
নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা কমবেশি সব নির্বাচনে দেখা গেলেও এবারই নির্বাচনের প্রার্থীরা সরাসরি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন বলে তিনি মনে করছেন।
মহিউদ্দীন আহমদ বলেন, “অনেক প্রার্থী প্রতিপক্ষের আক্রমণে আহত হয়েছেন। এটি আগে কখনও ঘটেনি। অনেক জায়গায় তারা পুলিশি বাধার মুখে পড়েছেন বলেও খবর পাওয়া গিয়েছে।”
বাংলাদেশে এর আগের নির্বাচনগুলোর বড় দলগুলো আগে তাদের রাজনৈতিক ইশতেহার প্রকাশ করতো এবং টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতো। কিন্তু এবার সেই ব্যাপারটি তেমন একটা দেখা যায়নি।
এর কারণ হিসেবে মি. আহমদ জানান, ধারাবাহিকভাবে ২০০৮ এর নির্বাচন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানদের বিটিভিতে নিজেদের বক্তব্য প্রচারের একটা সুযোগ দেয়া হতো, যেটা এবার হয়নি।
এছাড়া বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যে গুরুত্ব দিয়ে সরাসরি সম্প্রচার করছে সে তুলনায় বিরোধী দলের নেতাদের বক্তব্য তারা খুব সামান্যই প্রচার করছে বলে তিনি মনে করেন।
আগে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের সময় বিশাল বিশাল জনসভা করে ভোটের পক্ষে প্রচারণায় নামলেও এবার সেই ব্যাপারটিও অনুপস্থিত।
তার মানে কি বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রচারে বা রাজনীতির জনসংযোগের ক্ষেত্রে এসব সভা সমাবেশের গুরুত্ব কমে আসছে?
বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দীন আহমদ বলেন, “নির্বাচনের রুল অব গেমস বা নির্বাচনী মাঠের নিয়ম এখন আগের চাইতে অনেকটাই বদলে গেছে।”
“আগে মাঠে সবল প্রতিপক্ষ থাকলে মাঠে এক ধরণের পরিস্থিতি থাকতো। তখন মাঠের প্রচার প্রচারণায় সবাই সম-শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তো।”
তার মতে, এবারে বিরোধী দল একেবারেই অগোছালো এবং অপ্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে।
সেটার পেছনে সরকারি দলের পক্ষ থেকেও দেখা গিয়েছে যে তারাও ঠিক আগের মতো ওইভাবে প্রচারণায় যাচ্ছেন না।
মি. আহমদ বলেন, “সরকারি দল ধরেই নিয়েছে যে, তারা যেটুকু সুযোগ পাচ্ছে, সেটুকু কাজে লাগিয়েই তারা নির্বাচনে জিততে পারবে।”
কেননা পথে ঘাটে শুধুমাত্র তাদেরই পোস্টার দেখা যাচ্ছে এবং তারা প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় নিজ দলের সমর্থকদের নিয়ে মিছিল-মিটিং করছেন। কিন্তু বিরোধী দলের যারা আছেন তাদের কেউই এই সুযোগটি নিতে পারছেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন