‘নির্বাচনে পুলিশও প্রতিপক্ষ’ : বিরোধীদলের শঙ্কা
এবারের নির্বাচনে প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারাও বিরোধীদের প্রচারণায় বাধা দিয়েছে। অবশ্য এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে পুলিশ।
সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার ওসি মারুফ আহমেদ প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট চেয়ে বেশ আলোড়ন তুলেছেন।
নৌকায় ভোট চাওয়া সেই ওসির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এর পর তাকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে বিএনপি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকনের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল থানার ওসির বিরুদ্ধে।
এই অভিযোগের পর সোনাইমুড়ি থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়।
এ তো গেল দুটো উদাহরণ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ব্যাপক ধড়-পাকড়ের অভিযোগ ওঠে।
বিএনপি কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের পক্ষে গণসংযোগ করতে পারে এমন নেতা-কর্মীরা পুলিশের অন্যতম লক্ষ্য।
এমনকি নির্বাচনে যাতে ধানের শীষের পক্ষে কোন এজেন্ট পাওয়া না যায় সেজন্য তৎপর হয়ে উঠেছে পুলিশ। এমন অভিযোগ করছেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর এলাকার পলাতক এক বিএনপি নেতা মঈন উদ্দিন, যিনি বর্তমানে নিজের অবস্থান সম্পর্কে জানাতে চাননি।
তিনি বলছিলেন, মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নয়, পুলিশই তাদের প্রতিন্দ্বন্দ্বী।
“তারা (পুলিশ) ফোন করে করে বলতেছে পাঁচ তারিখের আগে না আসার জন্য। তারা বলতেছে এখানে আসলে মামলা ঢুকাই দিব,” মি: মঈন উদ্দিন বিবিসিকে জানালেন।
শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরাই নয়, ধানের শীষে ভোট দিতে পারে এমন সম্ভব্য কিছু ব্যক্তিও পুলিশের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন।
সত্তর-বছর বয়সী পাবনার সুজানগর থানার সৈয়দপুর গ্রামের আকমল শিকদার রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকলেও রাজশাহী যাওয়ার পথে পুলিশ হঠাৎ করেই তাকে বাস টার্মিনাল থেকে আটক করে।
ঢাকায় বসবাসরত তাঁর ছেলে আসাদুল্লাহ বলেন, “রাজনীতির সাথে তাঁর (বাবা) দূরতম সম্পর্ক নেই। আমাদের গ্রামে আমাদের জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর লোকজনের কেউ-কেউ ধানের শীষে ভোট দেয়।”
“গ্রামে কে-কোন মার্কায় ভোট দেয় সেটা সবাই জানে। সেই হিসেবে বেশ কয়েকদিন ধরে আমাদের গ্রামে পুলিশ আসছিল, যারা ধানের শীষে ভোট দেন এমন যাদের পাচ্ছিল তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছিল।”
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সাথে।
পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, পুলিশের আচরণের তীব্র সমালোচনা করার সময় তিনি ‘জানোয়ার’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
এরপর পুলিশ এসোসিয়েশন ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বিবৃতি দিয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, পুলিশকে ব্যবহার করে সরকার একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয়েছে।
উনিশশো একানব্বই সাল থেকে বাংলাদেশে অতীতে কোন নির্বাচনে পুলিশের এমন ভূমিকা ছিল কি না সে প্রশ্ন অনেকেই তুলছেন।
যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশন সব ধরণের অভিযোগ অস্বীকার করছে।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কথা বলার জন্য বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
তবে সাবেক পুলিশ প্রধান মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে যদি এরকম অভিযোগ থাকে তাহলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের এটি দেখার কথা।
তিনি বলেন, “পুলিশ তো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তার তো পলিটিকাল কোন রোল (ভূমিকা) নেই। অভিযোগ যারা করছেন তারা তো এক দলের। অতএব এটার সত্যাসত্য আছে কি না সেটা যাচাই করার একটি প্রক্রিয়া তো আছে। সে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত।”
বিভিন্ন জায়গায় বিরোধীদলীয় কর্মী-সমর্থকরা মনে করেন, নির্বাচনের দিনেও পুলিশ তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবেই থাকবে।
তবে বিভিন্ন থানায় পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের আটক করা হয়েছে বা হচ্ছে তাদের সবার নামেই মামলা রয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন