নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় নয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে থানায়।
ওই মামলার প্রধান আসামিসহ দুইজনকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব; নোয়াখালীর পুলিশ আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জেলার পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি হারুনুর রশীদ জানান, নির্যাতনের শিকার ওই নারী বাদী হয়ে রোববার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন। সেখানে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়।
আসামিরা হলেন- বাদল, মো. রহিম, আবুল কালাম, ইস্রাফিল হোসেন, সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব, আরিফ ও রহমত উল্যা। তাদের সবার বাড়ি বেগমগঞ্জে।
আসামিদের মধ্যে রহিম ও রহমত উল্যাকে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জেলার পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান।
আর র্যাব-১১ এর একটি দল সোমবার ভোরে ঢাকা থেকে প্রধান আসামি বাদলকে এবং নারায়ণগঞ্জে থেকে ওই চক্রের দলনেতা দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে বলে র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ জানান।
এদের মধ্যে দেলোয়ারের নাম মামলার এজাহারে নেই, তবে সেও ওই ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তার কাছে একটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আশিক বিল্লাহ।
তিনি বলেন, “দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।”
বেগমগঞ্জ উপজেলায় ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালানোর এক মাস পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর ৩৫ বছর বয়সী ওই নারীকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয় পুলিশ।
গ্রেপ্তার আসামি রহিমগ্রেপ্তার আসামি রহিমগ্রেপ্তার দেলোয়ারগ্রেপ্তার দেলোয়ারমামলার বরাত দিয়ে বেগমগঞ্জ থানান ওসি হারুনুর রশীদ বলেন, দাম্পত্য কলহের জেরে ওই নারী একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তার বাবার বাড়িতে থাকছিলেন। দীর্ঘদিন পর গত ২ সেপ্টেম্বর তার সঙ্গে দেখা করতে সেখানে যান তার স্বামী।
“সেদিন রাত ৯টার দিকে আসামিরা তাদের ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে এবং ওই নারীর স্বামীকে মারধর করে পাশের আরেকটি ঘরে নিয়ে বেঁধে রাখে। পরে তারা ওই নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তাতে বাধা দিলে আসামিরা তাকে নির্যাতন করে এবং মোবাইল ফোনে সেই দৃশ্য ভিডিও করতে থাকে। ওই নারীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আসামিরা কাউকে কিছু জানালে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়।”
এরপর ওই নারী কাউকে কিছু না জানিয়ে জেলা শহরের মাইজদীতে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানেও আসামিরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ‘কুপ্রস্তাব’ দেয়। রাজি না হলে সেই রাতের ভিডিও তারা ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই নারী তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় আসামিরা রোববার দুপুরে সেই ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে বোনের বাসা থেকে ওই নারীকে সরিয়ে নিয়ে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয় বলে জানান ওসি।
ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক একজন নারীকে বিবস্ত্র করে মারধর করছে। তাদের একজন পা দিয়ে ওই নারীর মুখ চেপে ধরেছে। বারবার আকুতি জানানোর পরও নির্যাতন করা বন্ধ করেনি তারা।
ওই নারীর বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ‘প্রভাবশালী হওয়ায়’ এতদিন ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস হয়নি তাদের।
এ বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন