নড়াইলে ‘ম্যানেজ’ করে চলছে অবৈধ ইটভাটা, পুড়ছে কাঠ

নড়াইল জেলার বিভিন্ন গ্রামে বেশ কয়েকটি অনুমোদনহীন ইটভাটায় কাঠ দিয়ে বছরের পর বছর ধরে ইট পোড়ানো হলেও তা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে চলছে এসব অবৈধ ইটভাটা। সংশ্লিষ্টদের হাত করে এসব ভাটা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন ভাটা সংশ্লিষ্টরা।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ইটভাটা স্থাপন করতে হাইব্রিড হফম্যান, জিগ-জ্যাগ, ভার্টিক্যাল শ্যাফট কিলন্ অথবা পরীক্ষিত নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের বিধান রয়েছে। তবে জেলার শিয়রবর, কাঠালতলা, আড়িয়ারা, কালনাঘাট বসুপটি, চৌগাছা, বুড়িখালিসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারের নীতিমালা তোয়াক্কা না করে অনুমোদন ও পরিবেশ অধিফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই একাধিক ইটভাটা চলছে। সবগুলো ইটভাটায় লোকালয়ের পাশে এবং ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শালনগর ইউনিয়নের শিয়রবর গ্রামে হীরা ব্রিকসের মালিক আবুল হাসান মোল্লা প্রতিদিন শতশত মন কাঠ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন।

ভাটা শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে নসিমন, ট্রাক্টর, এবং ঘোড়ার গাড়িতে কাঠ সংগ্রহ করা হয়। আর সেই কাঠ দিয়েই বছরের পর বছর ধরে চলছে এই ইটভাটা।

নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানায়, লোহাগড়া উপজেলায় ২৫টি ইটভাটা আছে। যার মধ্যে জিকজ্যাক দু’টি, ফিক্সড পাঁচটি, টিন চিমনি আছে সতেরটির। এর বেশিরভাগই চলছে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০)-এর ১২ ও ৪(২) (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফসলি জমিতে অথবা ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে লোকালয়ে এবং ফসলি জমিতে স্থাপিত লোহাগড়া উপজেলার এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন অথবা পরিবেশ অধিদফতরের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তারা জানান, যারা ইটভাটা করছেন তারা প্রভাবশালী। এ কারণে ইটভাটার ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলেও মানুষ ভয়ে কিছু বলছে না।

অনুমোদন ছাড়াই কিভাবে ভাটা চলছে জানতে চাইলে শালনগর ইউনিয়নের শিয়রবর গ্রামে প্রায় ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থাপিত মেসার্স হীরা ব্রিকসের মালিক আবুল হাসান মোল্লা জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই ইটভাটা পরিচালনা করা হচ্ছে।

প্রতিদিন শতশত মণ কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশ ধ্বংস বন্ধে জেলা প্রশাসন কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যহত থাকবে। আমরা প্রতিবছরই অবৈধ ইটভাটা কখনও ভেঙে দিয়ে আসি। কখনও কখনও জরিমানা করি। আমরা গতবছরই তাদের সতর্ক করেছিলাম, এবছর কেউ অবৈধভাবে ভাটা চালু করবে না।’

এরপরও যদি কেউ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভাটা চালু করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।