পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় অন্যের জমি দখল করে ঘর নির্মাণের অভিযোগ

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় অন্যের জমি জবর দখল করে জোরপূর্বক ঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে আব্বাস আলী ও মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের সর্দারপাড়া নামক এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে।

উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের বামনপাড়া গ্রামের মৃত সহিদুল হকের ছেলে খতিজার রহমান একই ইউনিয়নের সর্দারপাড়া গ্রামের মৃত ছালামত আলীর ছেলে আব্বাস আলী ও তার ছেলে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন।

সরে জমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার সর্দারপাড়া মৌজার জে.এল নং-২৪ এর এস.এ ৬৩২ নং খতিয়ানের এস.এ ৫৫৭৮ ও ৫৫৭৯ নং দাগের ১ একর ১০ শতক জমির রেকর্ডীয় মালিক ছারামদ্দিন আট আনা হিস্যায়, জুমুরদ্দিন, জহিরদ্দিন ও জয়নাল প্রত্যেকে এক আনা এগারো গন্ডা দুই কড়া তের তিল হিস্যায়, আকবর এক আনা এগারো গন্ডা দুই কড়া চৌদ্দ তিল হিস্যায় এবং সাহেরা খাতুন পনেরো গন্ডা তিন কড়া সাত তিল হিস্যায় মালিক ছিলেন।

রেকর্ডীয় মালিক জহিরদ্দিন, জয়নাল, আকবর আলী পক্ষে অভিভাবক মাতা ও স্বয়ং জুমারন বেওয়া এবং জুমুরদ্দিন গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৩ সালে ১১৮২ নং দলিলে মোবারক আলী ও ছারামদ্দিন এর নিকট ৩৩শতক জমি বিক্রয় করেন।

পরবর্তীতে ক্রেতা মালিক মোবারক গত ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ সালে ২০০৬২ নং দলিলে খতিজার রহমানের মাতা খতিরন নেছা ১৫শতক জমি ক্রয় করেন। এরপর গত ৫ জুলাই ২০০৪ সালে ২২৭৩ নং দলিলে ও রেকর্ডীয় ছারামদ্দিনের কন্যা হিসেবে গত ১৩ আগস্ট ১৯৮৭ সালে ১১৮৭৯ নং দলিলে খতিজার রহমানের নিকট ৩৭শতক জমি বিক্রয় করেন।

এরপর রেকর্ডীয় মালিক জুমুরদ্দিন, জহিরদ্দিন, জয়নাল ও আকবর গত ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭ সালে ২৩৭৫ নং দলিলে খতিজার রহমানের পিতা সইজুল হকের নিকট ২৫শতক জমি বিক্রয় করেন। এরপর সাহেরা খাতুনের ওয়ারিশ গত ২১ আগস্ট ২০২৩ সালে ২৩০৩ নং দলিলে ২.৭৮ শতক জমি এবং গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে ৩৩৩ নং দলিলে ৩.৩৩ শতক জমি খতিজার রহমান বরাবরে বিক্রয় করেন।

অপরদিকে রেকর্ডীয় মালিক ছারামদ্দিনের ওয়ারিশ মকবুল হোসেন গত ১ জানুয়ারি ২০১০ সালে ২১৭ নং দলিলে ৬শতক, গত ৭ অক্টোবর ১৯৮২ সালে ২৫৮৯ নং দলিলে ০৫ শতক, গত ২৭ মে ১৯৭৮ সালে ১২৮০৯ নং দলিলে ১২.৫০ শতক, গত ২৭ জুন ১৯৮৪ সালে ২৪৯১ নং দলিলে ১০ শতক ও গত ১১ জুন ১৯৮০ সালে ১৯৮৮ নং দলিলে ৭.৫০শতক এবং ছারামদ্দিনের স্ত্রী মশিরন নেছা গত ৫ নভেম্বর ১৯৮৪ সালে ৩.৭৫শতক জমি খতিজার রহমান বরাবরে বিক্রয় করেন।

জানা যায়, খতিজার রহমান তার মাতার অংশসহ দলিল মূলে সমুদ্বয় জমি গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ সালে ১৩৩৪ নং খতিয়ানে ৮৯ শতক, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে ১৮০৮ নং খতিয়ানে ৬শতক ও চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ১৮৩১নং খতিয়ানে ১৫শতক জমি নামজারি করেন।

এদিকে ওই তফসিলে পূর্বেই জমি কেনাবেচা শেষ হয়ে গেলেও অভিযুক্ত আব্বাস আলী ও তার ছেলে মিজানুর রহমান রেকর্ডীয় মালিক জয়নাল, জহিরদ্দিন ও ছারামদ্দিন এর ওয়ারিশগণের কাছ থেকে গত ১৪ নভেম্বর ২০২৩ সালে ৩০৪৭ নং দলিলে ৬.২৫শতক, গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে ৩২৮৭ নং দলিলে ২.৩৬ শতক ও গত ৩১ জুলাই ২০২৩ সালে ২১০১নং বায়নানামা দলিলে ২০শতক জমি ক্রয় করেন বলে জানা গেছে।

খতিজার রহমান বলেন, ৬৩২ নং খতিয়ানে তিনি তার পিতা-মাতা ও নিজের নামে ক্রয়কৃত ষোল আনা জমি ভোগদখল করাকালীন নামজারি করেছেন। নামজারি খতিয়ানের সংবাদ জেনে স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগের দোসর আব্বাস আলী ক্ষমতায় থাকতে তার ভোগদখলীয় আংশিক জমিতে জবরদখল করে রাতারাতি ভাড়াটে লোকজন নিয়ে এসে টিনের চাপড়া ঘর উত্তোলন করে জমি ঘেরাও করে নেন।

এ নিয়ে একাধিক বিচার-সালিশ হলে কোনো উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে পারছেন না আব্বাস আলী। কেবল লোকবল আর পেশী শক্তির জেরে জবর দখলের পাঁয়তারা করছেন। অবৈধভাবে জমি জবরদখল করে আত্মসাতের বিচারের দাবী জানিয়েছেন খতিজার রহমান।

এদিকে আব্বাস আলী বলেন, রেকর্ডধারী মানুষদের ওয়ারিশের কাছ থেকে তার ছেলের নামে ৯শতক, তার নিজ নামে বায়নানামা দলিল মূলে ২০শতক জমি ক্রয় করেছেন। আবার তার ছেলের নামে ২৮শতক জমি বায়নানামা করেছেন। তিনি বলেন, আদালত তাকে ২৮.৬১ শতক জমির রায় দিয়েছেন। রায় ও দলিল মূলে তিনি জমি দখল করেছেন।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই জমি নিয়ে বিচার-সালিশ হয়েছে। খতিজার রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা করার পর বিবাদী আব্বাস আলী ও তার ছেলে মিজানুর রহমানের দাবী ভিত্তিহীন প্রমাণিত হওয়ায় বিবাদীদ্বয় ওই জমিতে কোনো স্বত্ত্ব দাবী করতে পারেননা। অভিযোগকারী খতিজার রহমান ৬৩২ নং খতিয়ানের ১.১০ একর জমির সঠিক মালিক।