পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিও বাতিল চেয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে তৎকালীন সভাপতির স্বাক্ষর ও সীল জালজালিয়াতির মাধ্যমে পাঁচ শিক্ষক নিয়োগের সাম্প্রতিক এমপিও বাতিল চেয়ে এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছেন।
সোমবার (৫ মে) বেলা ১১টায় উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের মালিগছ গ্রামে অবস্থিত এমপিওভুক্ত ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে এই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়।
বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে জানা যায়, জালজালিয়াতির তৈরিকৃত পদ্ধতিতে ৫শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও কমিটির সদস্য সচিব আবু সুফিয়ান।
প্রতিষ্ঠান প্রধানের জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেখানো সাম্প্রতিক এমপিও প্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন- বাংলা বিষয়ের প্রভাষক বিমল কুমার রায়, কম্পিউটার আপারেশন বিষয়ের প্রভাষক সফিকুল আলম, সাচিবিকবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক দিলিয়ারা বেগম, ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক দিলারা বেগম এবং নিন্মমান সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক/কম্পিউটার অপারেটর উম্মে বিনতে সালমা।
প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হওয়ার পর গত ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখে কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে ৯জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আহবান করা হয় এবং ২০০৬ সালের জুন মাসের ২৫ তারিখ ৯জন শিক্ষক-কর্মচারীকে অনুমোদন দেয়া হয়।
পরে ওই সালের জুন মাসের ২৮ তারিখে অধ্যক্ষ এবং পরের দিন ২৯ তারিখে ৮জন শিক্ষক-কর্মচারী যোগদান করেন। এরপর গত ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর দীর্ঘ ৯বছর পর দুই হাজার ৭৩০টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) ভুক্ত করা হয়। এরই ধারবাহিকতায় উপজেলার ওই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত করেন সরকার।
আরোও জানা যায়, প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও করণের লক্ষ্যে গত ২০২০ সালের মে মাসের ৩১ তারিখের ভিটিবিএমসি/২০২০/৩০ নং স্বারকে ৯জনের নাম পদবী ও বেতন উল্লেখ করে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে একটি আবেদন করেন।
এদের মধ্যে অধ্যক্ষ ১জন, ডেমোনেষ্টেটর কাম মেকানিক ২জন, সহকারী লাইব্রেরীয়ান ১জন, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী ১জন, কম্পিউটার ল্যাব এসিসটেন্ট ১জন, টাইপিং ল্যাব সহকারী ১জন, গার্ড কাম এমএলএসএস ১জন এবং এমএলএসএস(নৈশ্যপ্রহরী) ১জন।
প্রতিষ্ঠান প্রধান গত ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখের ৫৭.০৩.০০০০.০৯১.২০.০০৭.২০-৩১৭ নং স্বারকের সূত্রমতে গত ২০২০ সালের মে মাসের ৩১ তারিখের ভিটিবিএমসি/২০২০/৩০ নং স্বারকে মহাপরিচালক, বালাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবরে যে ৯জন শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং কর্মচারীর এমপিও করণের আবেদন পাঠান। এরপর অসম্পূর্ণ/ত্রুটিপূর্ণ/সমস্যাযুক্ত কাগজ-পত্রাদি সংশোধন করে ৪জনের এমপিও পেয়েছেন প্রতিষ্ঠান।
এদিকে ৯জন শিক্ষক-কর্মচারীর ঝড়ঝান্ডা শেষ হতে না হতেই প্রতিষ্ঠান প্রধান আবু সুফিয়ান গত ২০০৬ সালের জুন মাসের ৩০ তারিখে কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে ৫জনের নিয়োগ প্রক্রিযা তৈরি করেন এবং গত ২০০৬ সালের জুলাই মাসের ২৯ তারিখে ৫জনের নিয়োগটি অনুমোদন করেন।
অথচ আগের নিয়োগকৃত শিক্ষকদের নামের তালিকা গত ২০২০ সালের মে মাসের ৩১ তারিখের ভিটিবিএমসি/২০২০/৩০ নং স্বারকে এবং গত ২০২০ সালের জুন মাসের ১৫ তারিখে অত্র প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নিকট প্রেরিত তালিকায় ওই ৫জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এরপর ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ৫ তারিখ প্রতিষ্ঠান প্রধান ১৬ জনের নামের তালিকা সভাপতি ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বি.এম কলেজ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নিকট উপস্থাপন করলে রেজুলেশন গুলো খতিয়ে দেখার পর সীল ও স্বাক্ষর অমিল এবং কতিপয় ব্যক্তির বক্তব্যের ভিত্তিতে ফাইলটি সন্দেহ সহ জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিউজ প্রকাশের পর ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রাক্তন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুল হাসানকে আহবায়ক করে ৩সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসেই সরেজমিনে তদন্ত করার পর ওই অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ানের কাছ থেকে উপযুক্ত কাগজপত্রাদি দেখতে ও জানতে প্রাক্তন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বি বারংবার ডাকলেও কোনো তোয়াক্কা করেননি তিনি।
এর আগে গত মাসের ১৩ এপ্রিল সরেজমিনে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের আব্দুল মজিদ, মোস্তফা কামাল, শাহীন শাহ, আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুস সালাম প্রধান বলেন, সাম্প্রতিক এমপিও পাওয়া এই পাঁচ শিক্ষককে তারা কোনো দিন প্রতিষ্ঠানে আসতে দেখেননি। কিভাবে সকলের অজান্তে এই শিক্ষকগুলো নিয়োগ পেল। অবৈধতার আশ্রয় নিয়ে এই শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে তারা সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে এমপিও বাতিলের দাবি জানান।
উক্ত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে এলাকাবাসীর মধ্যে পিন্টু, জাহেদ, সামিউল, রশিদ, উমের, পবার উদ্দিন, জাকির ও কাজিম সহ অনেকেই বলেন, ওই প্রতিষ্ঠান প্রধান আবু সুফিয়ান নিয়মিত কলেজে আসেননা। তিনি নিয়োগ বাণিজ্যের বিনিময়ে অবৈধভাবে ৫ শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। যাদের কলেজের দাঁড়েও আসতে দেখেননি তারা।
শুধু তাই নয়, যে প্রধান শিক্ষকের থাকার মত উপযুক্ত জায়গা ছিলনা সে আজ অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে পঞ্চগড়ে গড়ে তুলেছেন বাসা বাড়ী। অনতিবিলম্বে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত পাঁচ শিক্ষকের এমপিও বাতিলসহ বিদ্যালয় মাঠে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত অংশীদারদের জমিজমা বুঝে দিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোরদার দাবি তুলে ধরেছেন।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান বলেন, কেউ অভিযোগ করতেই পারে। ছয় সালের নিয়োগই ফাইনাল। জালিয়াতির মাধ্যমে পাঁচ শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে আগে যে তদন্ত করা হয়েছে এমনটি বলতেই তিনি বলেন, সেই তদন্ত কর্মকর্তা তার প্রতিষ্ঠানে না গিয়েই তদন্ত করেছেন।
তিনি গত মাসের ৬ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, অফিসের কাজে কলেজে আসতে পারেননি। কোনো ছুটি না নিয়েই ছয়দিন অনুপস্থিত কেন থাকলেন? উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অধ্যক্ষের কোনো অনুমতি লাগেনা।
অধ্যক্ষ যেখানেই যাবেন সেখানেই অফিস। অন্যান্য কোনো কলেজেই হাজিরা দিতে হয়না। আমিই এটি চালু রেখেছি। তিনি আরও বলেন, বেতন না হওয়ার সেই পাঁচ শিক্ষক কলেজে আসেননি। বেতন-ভাতা পেলেই কলেজে আসা শুরু করবেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, তিনি ওই বিদ্যালয়ের মানববন্ধনের বিষয়ে অবগত আছেন। তিনি বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর সেটির সঙ্গে আগের তদন্ত রিপোর্টসহ কারিগরি অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন