মানা হচ্ছেনা সরকারি বিধিনিষেধ!

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ড্রেজারের পর ট্রাক্টর দিয়ে ডাহুক নদীতে পাথর উত্তোলন

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ড্রেজারের পর ট্রাক্টর দিয়ে ডাহুক নদীতে নির্বিচারে চলছে পাথর উত্তোলন। বলা যায়, অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদীটি। হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা রূপ। বন্ধ হয়ে গেছে নদীর গতিপথ। নদীসংলগ্ন অনেকের জমি ও বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও অভিযোগও রয়েছে। বর্ষার সময়ে অল্প বৃষ্টিতেই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুই পাড়ের জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে বিভিন্ন ফসল।

কয়েক বছর আগে, এই ডাহুক নদীর বুক চিরে পাথর তুলতে চালানো হতো অত্যাধুনিক ড্রেজার মেশিন। এসব মেশিন দিয়ে মাটির ২০০ থেকে ২৫০ ফিট গভীর থেকে পাথর উত্তোলনের নদীর বুকে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। এখন ড্রেজার মেশিনের পরিবর্তে নদীতে অভিনব পদ্ধতিতে ট্রাক্টর দিয়ে চলছে পাথর উত্তোলন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শালবাহান ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, গুচ্ছগ্রাম, লোহাকাচী, বালাবাড়ি এবং বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বুড়াবড়ি ডাহুক ব্রিজ সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে, কাটাপাড়া, সরকারপাড়া ও হারাদীঘি নামক এলাকায় ডাহুক নদীতে চলছে পাওয়ার ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখা হতে জানা যায়, গত ২০১৩ সালের মার্চ মাসের ১৪ তারিখের গেজেট প্রকাশের পর বাংলা ১৪২৬ সন হতে সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডাহুক নদীর পাথর মহাল ইজারা বন্ধ করা হয়েছে। অথচ সরকারি সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে শ্রমিক নামিয়ে পাথর উত্তোলন করেই চলছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখতে ও জানতে পারা যায়, নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাক্টর দিয়ে পাথর তুলছেন শ্রমিকরা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, নদীতে প্রায় ৮০ থেকে ১০০টি সাইট রয়েছে। এসব সাইট থেকে দিন দুপুরে উত্তোলন হচ্ছে হাজার হাজার সিএফটি পাথর। পাথর উত্তোলিত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের আগা শালবাহানের আনিছুর, সানু বালাবাড়ী এলাকার আবু, আহাদ, জুয়েল, জাকের, কাজীগছ এলাকার আশরাফুল ইসলাম(চেয়ারম্যান), পলাশ (বিভিন্ন ক্ষমতাশীন ব্যক্তির পরিচয় দানকারী ব্যক্তি) ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের মান্দুলপাড়া এলাকার মনছুরগং, বন্দিভিটা গ্রামের মোতালেব ওরফে মোতা, সর্দারগছ এলাকার জিয়ারুল, আলমগীর ও আহসানসহ আরো অনেকেই এসব সাইট চালিয়ে আসছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পাথর শ্রমিক বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে ট্রাক্টরের ইঞ্জিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করছেন মহাজনরা। এই ভাবে পাথর উত্তোলন করতে ৮-১০জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয় বলে জানতে পারা গেছে। তবে একটি খাত বা সাইটে পানিতে ডুবে বেধা দিয়ে টেনে যেসব পাথর কোয়ারীরা পাথর উত্তোলন করতেন তাতে ১৫-২০জন শ্রমিক প্রয়োজন হত।

পাথর উত্তোলনের লাইন ম্যান ও নিজেকে ক্ষমতাশীন পরিচয় দানকারী ব্যক্তি পলাশের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি পাথর উত্তোলনের কথা অস্বীকার করে বলেন- আমার নিয়ন্ত্রণে কোন পাথর উত্তোলন হচ্ছে না। আপনি সকল সাইটের লাইন ম্যান এবং আপনি একজন ক্ষমতাশীন ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে আসছেন পাথর শ্রমিকসহ অনেকেই বলছেন জিজ্ঞাসায় তিনি কোনো সদুত্তোর দেয়নি। এদিকে পলাশকে এসব কথা জিজ্ঞাসা করতে মুঠোফোনে ফোন করলে আমার বিকাশ নম্বর চাই।

এদিকে শালবাহান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে মাস খানিক এবং রিপোর্ট লেখার দু’দিন আগে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমার সাইট আছে তবে অন্যের বিষয়ে আমি জানিনা। আপনি এসব লেখালেখি করে গরিবের পেটে লাথি দিয়েন না।

পাথর উত্তোলন বিষয়ে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বাদল বলেন, ডাহুক নদীতে যে পাথর উত্তোলন হচ্ছে তা অবৈধভাবেই উত্তোলন করা হচ্ছে। তিনি নদীতে অবস্থিত খাস দাগের জমিসহ সিকস্তি ও পয়স্তি জমিতে পাথর উত্তোলন অবৈধ বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যখন তাঁরা অভিযানে ফিল্ডে যায় তখন তাঁরা (পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিক ও মহাজনরা) সরে যায় আবার যখন চলে আসি তখন পুনরায় পাথর উত্তোলন শুরু করেন।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় জানান, আপনি জানেন আমি নতুন এই থানায় যোগদান করেছি। কোথায় পাথর উত্তোলন হচ্ছে এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম অবশ্যই ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন কারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বি বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। যাতে কোনোভাবেই ডাহুক নদীতে এ ধরনের ট্রাক্টর দিয়ে কেউ পাথর তুলতে না পারে এর আগেও ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং তা চলমান থাকবে।