পঞ্চগড়ে অ্যাসাইনমেন্ট ও ইউনিক আইডি কার্ডে টাকা আদায়!
পঞ্চগড় জেলাধীন তেঁতুলিয়া উপজেলায় প্রাণঘাতী করোনা (কোভিট-১৯) মহামারিতেও স্কুলে অ্যাসাইনমেন্ট ও ইউনিক আইডি কার্ডের ফরম জমা দিতে টাকা আদায়ে ব্যস্থ সময় কাটাচ্ছেন অভিযোগ উঠেছে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
উপজেলার ৫নং বুড়াবুড়ি ইউপির নাওয়াপাড়ায় অবস্থিত নাওয়াপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে এই মৌখিক অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, এই প্রধান শিক্ষক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের ২৪ জুলাই ২০২১ তারিখের ৩৭.০২.০০০০.১০৭.৩৭.০০৩.২১.৪২৭ নং স্বারকের আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সোমবার (২৬ জুলাই) ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ২০ (বিশ) টাকা আদায় পূর্বক অ্যাসাইনমেন্ট জমা নিয়েছেন।
অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কে জানা যায়, চলতি বছরের ২০ মার্চ থেকে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর লকডাউনের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায় অতঃপর ২৩ মে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম আবার শুরু করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
বিদ্যালয়ে পড়োয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীরা জানান, রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীরা যত সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট স্কুলে জমা দিয়েছেন তার বিনিময়ে ২০ (বিশ) টাকা করে প্রধান শিক্ষক আদায় করেছেন। যা ওয়েব সাইট থেকে কম্পিউটার দোকান গুলো ডাউনলোড করে একসেট প্রিন্ট বের করে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট বিক্রি করছেন পাঁচ টাকায়। শুধু তাই নয়, ইউনিক আইডি কার্ডের ফরম বিতরণ ও জমা নিতে কোনো প্রকার অর্থ ছাড়াই শিক্ষার্থীগণ সেই সুবিধা ভোগ করতে পারবে আদেশ থাকলেও অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গরিব দুখি ও অসহায় কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা করে আদায় করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, তার দুইজনকে এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করান।
বর্তমানে করোনা মহামারিতে অনেকেই কর্মহীন তার নেই কোনো আয়ের উৎস। খুবই কষ্টে চলে তার সংসার। এদিকে সপ্তাহ না পেরুতেই অ্যাসাইনমেন্ট ও কাগজের জন্য গুনতে হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, বাজারে কম্পিউটার দোকান গুলো থেকে কিনতে পাওয়া অ্যাসাইনমেন্ট এই বিদ্যালয়ে চলে না। তাদের কাছ থেকেই নিতে হয় অ্যাসাইনমেন্ট গুলো।
সরেজমিনে ওই ইউনিয়নের আয়ুব-উল-হক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বুড়াবুড়ি মির্জা গোলাম হাফেজ উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্যান্য ইউনিয়নের কতিপয় স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা অ্যাসাইমেন্ট গুলো নিকস্থ ফটোকপি ও কম্পিউটারের দোকান থেকে পাঁচ টাকা ক্রয় করার পর এফোর সাইজের পেজ ক্রয় করে তারই উপর প্রশ্নোত্তর লিখে স্কুলে জমা দেয় এবং এটাও জানতে পারা গেছেন যে, যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা ইউনিক আইডি কার্ডের ফরম জমা দিয়েছেন তাদের কাছ থেকে ইউনিক আইডি কার্ডের ফরম জমা দিতে কোনো প্রকার টাকা লাগেননি।
এ বিষয়ে নাওয়াপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউনিক আইডি কার্ডের ফরম মেইল করতে খরচ লাগে সে কারণেই তিনি প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা করে আদায় করছেন।
কিন্তু অধিদপ্তর কর্তৃক ইউনিক আইডি কার্ডের ফরম মেইল করা বাবদ খরচ প্রদান করা হবে প্রশ্নোত্তরে বলেন, কখন দিবে সেই আশায় বসে থাকলে চলবেনা তাই তিনি মেইল খরচ বাবদ এই ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা আদায় করে নিচ্ছেন।
অপরদিকে অ্যাসাইনমেন্ট বিশ টাকা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, অ্যাসাইনমেন্টে তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে প্রিন্ট বের করা হয় তাই তিনি এই বিশ টাকা প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আদায় করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পারভীন অকতার বানুতে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এই বিষয়ে একাডেমিক সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
অতঃপর একাডেমিক সুপারভাইজার সাহেব আলী জানান, ইউনিক আইডি কার্ডের জন্য যে ফরম রয়েছে তা উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামুল্যে বিতরণ করা হয়।
শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক এ বিষয়ের উপর প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানগণকে প্রশিক্ষণ নেয়ার ব্যবস্থাও করা হবে এবং শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি কার্ডের জন্য যা যা করনীয় বাবদ অর্থ ব্যয় হবে সে অর্থ প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ সরকারিভাবে পাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরোও বলেন, অ্যাসাইনমেন্টের বিষয়টি প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ সরাসরি বোর্ডের দিক নির্দেশনায় করেন। কে কি ভাবে অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেন তা তিনি বলতে পারছেন না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন