পঞ্চগড়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করতোয়া সোলার লিঃ স্থাপনে তোড়জোড়!
সর্বউত্তরের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় জেলা প্রশাসকের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করতোয়া সোলার লিমিটেড এর ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরশক্তি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বেক্সিমকো কোম্পানির তোড়জোড়ের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের শেখগছ মৌজার জে.এল.নং ৩২-এর বাংলাচন্ডি গ্রামে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ বিহীন নিয়ম বহির্ভুত এলাকাবাসিকে মামলায় ফাঁসানোর লক্ষ্যে রোপনকৃত আমন ধানের উপর অবৈধভাবে রাতের আধারে লাল ঝান্ডা টাঙিয়ে দেয়ার এই ঘটনাটি ঘটে। এতে এলাকাবাসির মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছেন। করতোয়া সোলার লিমিটেড এর উক্ত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ওই গ্রামের মৃত বয়জদ্দিনের ছেলে আব্দুল কাদের জেলা প্রশাসক পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
আদালতের আদেশবিহীন আবাদী/ধানী জমিতে রাতের আধারে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে লাল ঝান্ডা।
লাল ঝান্ডা তুললেই এলাকাবাসিকে মামলায় ফাসিয়ে দিবেন কোম্পানি।
করতোয়া সোলার লিমিটেড মানছেন না জেলা প্রশাসকের কোনো আদেশ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার শেখগছ মৌজার জে.এল নং ৩২ এর সাবেক খতিয়ান ৮৯০, ৭১৪/১ ও ২৩১৫ যাহার এস.এ খতিয়ান নং ৫৯৫, ৩৪৪, ১১০, ১১১, ১৫৭, ৩০১ ও ৩০২ এর এস.এ ৩৮৯৪ নং দাগে ৩৩শতক, ৩৮৯১ নং দাগে ১২শতক, ৩৮৮১ নং দাগে ০৬শতক, ৩৮৮৩ নং দাগে ১৫শতক ও ৩৮৮৫ নং দাগে ৮শতক জমির বিজ্ঞ তেঁতুলিয়া সহকারী জজ আদালতে ৭০/২০২১ ও ৭১/২০২১ নং মামলা এনালোগেজে বিচারাধীন রয়েছে।
এই দুই মামলার ৪৪ ও ৬১নং ক্রমিকের বিবাদী বাংলাচন্ডি গ্রামের মৃত জমির উদ্দীনের ছেলে নাসির উদ্দিনের কাছ থেকে বেক্সিমকো কোম্পানি তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান করতোয়া সোলার লিমিটেড এর ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরশক্তি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে আংশিক ক্রয় করেন। আংশিক ক্রয়ের পর থেকেই আব্দুল কাদেরসহ এলাকাবাসি লোকজনদের আবাদী জমির ষোলআনায় বেক্সিমকো কোম্পানি জবর দখলের পাঁয়তারা করছেন। যে কোন সময় কোনো না কোনো দুর্ঘটনা দেখিয়ে বা সৃষ্টি করে আব্দুল কাদেরসহ এলাকাবাসির উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন এবং আবাদী জমিগুলো জবর দখলে নিবেন। অভিযোগে আরও জানা যায়, জেলা প্রশাসকের গত ২০২১ সালের আগস্ট মাসের ১৮ তারিখের ৩১.৪৭.৭৭০০.০১৭.৪২.০০৩.২১.৭০৩ নং স্মারকে করতোয়া সোলার লিমিটেড কর্তৃক ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরশক্তি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের নিমিত্তে জমি ক্রয়ের পূর্বানুমতির আদেশে শর্তাবলী বেধে দেয়া হলে তা লঙ্ঘন করেছেন।অপরদিকে বেক্সিমকো কোম্পানি ‘করতোয়া সোলার লিমিটেড’ নামে জমি ক্রয় না করে ব্যক্তি মালিকানা নামে জমি ক্রয় করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বেক্সিমকো কোম্পানি ক্ষমতাশালী এক মিডিয়া দিয়ে শেখগছ মৌজার জমাজমি ক্রয় করেন। এতে কোম্পানির জমি ক্রয়ে কাগজপত্রের তেমন সঠিকতার প্রয়োজন হয়না বলে জানা গেছে। জানা যায়, বেক্সিমকো কোম্পানি ওই এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিউমার্কেট ১২০৫ এলাকার ধানমন্ডি আ/এ, রোড নং- ০৫, বাসা নং- ৫০ এর মৃত সাবের আহাম্মদ চৌধুরীর ছেলে ওসমান কায়সার চৌধুরী নামে জমি ক্রয় করেন।
আরোও জানা যায়, ক্ষমতাশীন এক জমির মিডিয়াসহ আরও অন্যান্য মিডিয়া ও নিয়মিত দলিল লেখকদের সহযোগিতায় বেক্সিমকো কোম্পানি ভুয়া ওয়ারিশান ও দাখিলার মাধ্যমে বিভিন্ন দলিল সম্পাদন করেছেন।
ওই ইউনিয়নের বাংলাচন্ডি গ্রামের মৃত বয়জদ্দিনের ছেলে আব্দুল কাদের, মৃত হবিবর রহমানের ছেলে রিজিবুল, সফিজুল ইসলামের ছেলে হাসান, আব্দুল কাদেরের ছেলে নুরল ও আব্দুস সামাতের ছেলে এরশাদ জানান- বেক্সিমকো কোম্পানি একটি করতোয়া সোলার লিমিটেড এর ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরশক্তি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য তাদের একমাত্র সংসারে উপার্জিত আবাদী বা ফসলী জমি জবর দখল করার পাঁয়তারা করছেন। কোম্পানি গ্রামবাসির উপর বিভিন্ন হয়রানি করার লক্ষ্যে সকলের অজান্তে রাতের আধারে দালালদের দ্বারা তাদের বর্তমান রোপনকৃত আমন ধানের ক্ষেতের উপর লাল ঝান্ডা দিয়েছেন। এতে গ্রামবাসী আতঙ্কে জীবন-যাপন করছেন। তাঁরা বলেন, রাতের আধারে অবৈধভাবে লাল ঝান্ডা টাঙিয়ে দেয়ার অনুমতি দিলেন কে? তাঁরা আরও বলেন, এই কোম্পানিকে জেলা প্রশাসক মহোদয় আবাদি বা ফসলী জমি ক্রয় করতে নিষেধ করলেও কোম্পানি তা মানছেন না।
এ বিষয়ে করতোয়া সোলার লিমিটেড এর ফোরম্যান হানিফ মুঠোফোনে বলেন, বেক্সিমকো কোম্পানির ক্রয়কৃত উচু নিচু জমি গুলো ভেকু দিয়ে লেভেল করছেন। আপনারা করতোয়া সোলার লিমিটেড এর জন্য এলাকার আবাদী জমি দখল করছেন এবং লাল ঝান্ডা দিয়েছেন এমন প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, আপনি জানেন এটি একটি সরকারিভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে, কোম্পানি ওই আবাদী জমি দেখার জন্য পাঠিয়েছিলেন পরে এলাকার মানুষ বাধা দিলে সেখানে আর যাওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, নাসির নামে একজন ব্যক্তির কাছ থেকে বেক্সিমকো কোম্পানি ওই এলাকায় ২একর জমি ক্রয় করছেন।
বেক্সিমকো কোম্পানির জমি ক্রয়ে দাখিলা নেয়ার ব্যাপারে দেবনগড় ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, কোম্পানি সাম্প্রতিক যে দলিল সম্পাদন করেছেন এতে আমার কাছ থেকে কোনো দাখিলা নেয়া হয়নি। আমি এ বিষয়ে জানিও না।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন, দরখাস্ত দেখার সময় মেলেনি দরখাস্তটি দেখলেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন