পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ২৬৩ বস্তা সারসহ বিসিআইসি ডিলার আটক অতঃপর কারাগারে

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় অবৈধভাবে মজুত করে রাখা ২৬৩ বস্তা ডিএপি সার জব্দসহ বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) ডিলার ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফা জামাল রাজুকে আটক করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে অভিযানকালে সরকারপাড়া গ্রামের মৃত মহিব উদ্দিনের ছেলে ফয়জুল হকের বাড়ীতে রাখা ১৭৩ বস্তা এবং কালদাসপাড়া এলাকায় মোস্তাফা জামাল রাজুর নিজস্ব চায়ের বাগানে মজুদ রাখা ৯০ বস্তা ডিএপি সার জব্দ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) আটককৃত বিসিআইসি ডিলারকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

অভিযানের সময় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ তারেক হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অফিসার জীবন ইসলাম, তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মোতালেব, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াস ফারুক, ইউপি সদস্য মোঃ আইবুল হক, ইউপি সদস্য আতাউর রহমান, ইউপি সদস্য তারিফ হোসেন প্রধান, সাংবাদিক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সর্বসাধারনগণ উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, ওই ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স রুম্পা এন্টারপ্রাইজের মালিক সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল (রাজু)। মোস্তফা জামাল রাজু বাজারে সারের দাম বৃদ্ধির লক্ষে অবৈধভাবে দুটি স্থানে ২৬৩ বস্তা ডিএপি সার মজুত করে রেখেছিলেন। দেশে সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার খবরে কৃষকদের বরাদ্দকৃত সার রাতের আধাঁরে ও ভোর রাতে বিভিন্ন জায়গায় মজুদ করে রাখেন মোস্তফা জামাল (রাজু)।

দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সকাল থেকে উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মচারীরা ডিলার পয়েন্টে সার মজুদের তথ্য সংগ্রহ করেন এবং পূর্বের দরে বিক্রি করার পরামর্শ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় মেসার্স রুম্পা এন্টারপ্রাইজে এমওপি-৫০ বস্তা ও টিএসপি-৫০ বস্তা মজুদের বিবরণ দেয়া হয়েছে। বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স রুম্পা এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক অবৈধভাবে মজুদের তথ্যের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কয়েক জন সাংবাদিক গত বুধবার সকালে ফয়জুল মিস্ত্রীর বাড়ীর বাহিরে তাঁর পরিবারকে অবৈধভাবে সার মজুদ রাখার কথা জিজ্ঞাসা করতেই রাগান্বিত হয় এবং বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়। ওই সময়ে সাংবাদিকরা উপায় অন্ত খুঁজে না পেয়ে চলে আসেন শিলাইকুঠি বাজারে।

এদিকে সাংবাদিকগণ ফিরে আসার ২০ মিনিটেই ফয়জুলের ছেলে মমিরুল অটো ভ্যানে সার গুলো অন্যত্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য লোড শুরু করেন। সোর্সের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে সাংবাদিকগণ উপস্থিত হোন এবং ভ্যানে লোডকৃত সার গুলো ক্যামেরা বন্দি করেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহাকে অবগত করা হলে তিনি কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলমকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দেন। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম সরেজমিনে এসে ফয়জুল হকের বাড়ীতে থাকা আনুমানিক ১৬৩ বস্তা ও চা-বাগানে আনুমানিক ৭৬ বস্তা ডিএপি সারের জব্দ তালিকা দেখিয়ে চেয়ারম্যানের ও ইউপি সদস্যদের হেফাজতে রাখেন। পরের দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এ·িকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সোহাগ চন্দ্র সাহা অভিযান পরিচালনা করলে সর্বসাকুল্যে ২৬৩ বস্তা ডিএপি সার জব্দ তালিকা করা হয়।

স্থানীয় কৃষকরা বলেন, দাম বৃদ্ধির লক্ষে এভাবে সার মজুত করা হয়। পরে কৃষকদের কাছ থেকে সারের দাম বেশি নেওয়া হয়। খুব ভালো হয়েছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

সারের ডিলার ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফা জামান রাজু বলেন, আমি সারের ডিলার। আমিতো চুরি-ডাকাতি করিনি। গতকালও ইউরিয়া সারের জন্য টাকা পেমেন্ট করলাম। বুড়াবুড়ি বাজারে গোডাউন না পাওয়ায় এখানে রাখতে হয়েছে। এসব বিষয়ে কোনো আইন জানা না থাকায় এভাবে রেখেছিলাম। তাই আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে সারগুলো পূর্বের দামে বিক্রি করে দেওয়ার অনুরোধ জানালেও কাজ হয়নি।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, সার জব্দের ঘটনায় বিসিআইসির ডিলার মেসার্স রুম্পা ট্রেডার্সের মালিক মোস্তফা জামাল রাজুকে থানা হেফাজতে নেওয়ার নেয়ার পর মামলা দায়ের করে আজ (১৪ এপ্রিল) আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) ও এ·িকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, মেসার্স রুম্পা ট্রেডার্সের মালিক ও ডিলার মোস্তফা জামাল রাজু তার গোডাউনে সার না রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রির লক্ষে অবৈধভাবে ২৬৩ বস্তা সার মজুত করে রাখেন। খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে আমরা প্রথমে একটি বাড়ি থেকে ১৭৩ বস্তা ও অন্য একটি স্থান থেকে ৯০ বস্তা ডিএপি সার উদ্ধার করে জব্দ করি। এ ঘটনায় বিসিআইসির ডিলারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে থানা হেফাজতে নেওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি আরোও বলেন, সারের কৃত্রিম সংকট তৈরির অপচেষ্টা প্রতিরোধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।