পটুয়াখালীর গলাচিপায় পান চুরির অপবাদে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ৬নং ডাকুয়া ইউনিয়নে পান চুরির মিথ্যা অপবাদে মধ্যযুগীয় কায়দায় দুই শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।

শনিবার বিকালে স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ড আ. লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জামাল মোল্লার (৪৫) নেতৃত্বে ডাকুয়া ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় সালিশ বসিয়ে ওই দুই শিক্ষার্থীকে মারধর ও নির্যাতন করে। এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসী অভিযুক্তদের বিচার দাবি করেন।

নির্যাতনের শিকার একই এলাকার মো. রফিক এর ছেলে তরিকুল (১৬) সরকারি টে·টাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও মো. রাজ্জাক হাওলাদার এর ছেলে রুমান (১৪) গলাচিপা পূর্ব আটখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় মারধরের পর আহত দুই শিক্ষার্থীকে পরিবার ও এলাকাবাসীর সহায়তায় উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের পরিবার জানায়, জামাল মোল্লা ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল মোল্লার ছেলে। গ্রামের মধ্যে জনপ্রতিনিধি থাকা সত্বেও জামাল মোল্লা ও তার সঙ্গীয় বাহিনী এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে যে কোন ঘটনার সালিশ বিচার করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার ওই এলাকার ননীবালা নামে এক পান চাষীর পান চুরি করেছে ওই দুই শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ তুলে ডাকুয়া ইউনিয়নের বাংলাবাজারে সালিশি বসায়। এসময় ওই দুই শিক্ষার্থীকে লাঠি ও বাশ দিয়ে জামাল মোল্লার নেতৃত্বে আলমাস মোল্লা, জহিরুল মোল্লা, রহমান মোল্লা, কামাল মোল্লা ও সোহেল প্যাদা বেধড়ক মারধর ও নির্যাতন করে। এছাড়া মারধর করে জোরপূর্বক চুরির স্বীকারোক্তি আদায় করে এবং ফোনে পরিবারের নিকট ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবি করে। পরে সালিশিতে স্থানীয় ইউপি সদস্য হাজির হলে তিনি উল্টো জামাল মোল্লা পক্ষ নিয়ে ওই দুই শিক্ষার্থীর ওপর চড়াও হয় এবং সাদা কাগজে মুচলেকা রেখে পরিবারের কাছে তুলে দেন।

মারধরের শিকার এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কোন পান চুরি করিনি। আমাদের বাবা মা এমন শিক্ষা দেয়নি যে পান চুরি করতে যাবো। তাছাড়া আমরা শিক্ষার্থী পড়াশোনা করি। জামাল মোল্লা তার সঙ্গীরা আমাদের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ধরে নিয়ে মারধর করেছে। জোর করে মারধর করে স্বীকার কারাইছে চুরি করছি। আমার বোনের কাছে ফোন দিয়া ৩০ হাজার টাকা চাইছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

মারধরের শিকার এক শিক্ষার্থীর বাবা মো. রফিক বলেন, আমি কাজে ছিলাম এমন সময় জামাল ফোন দিয়ে বলে আপনার ছেলেরে পানসহ ধরছি। আমি অপেক্ষা করতে বললে তারা অপেক্ষা না করেই মারধর করছে। আমার ছেলে কোন চুরি করে নাই তাকে মিথ্যা অপবাদে মারধর করছে। মারধরে ছেলে অনেক অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাকির খান বলেন, সালিশে আমি উপস্থিত ছিলাম না। সালিশির শেষে আমি গিয়ে তাদের উদ্ধার করে পরিবারের কাছে তুলে দিয়েছি। কোন ধরনের সাদা কাগজে মুচলেকা রাখিনি।

অভিযুক্ত জামাল মোল্লা বলেন, এক চাষীর পান চুরির অভিযোগে স্থানীয় অনেক লোকজনের উপস্থিতিতে সালিশে বিচার করা হয়েছে। তাদের কোন মারধর ও নির্যাতন করা হয়নি। তবে স্থানীয় পান চাষী ননীবালা বলেন, তিনি কোন অভিযোগ করেননি এবং তার পান চুরি হয়নি।