পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো প্রথম দৃশ্যমান হবে জাজিরা প্রান্তে
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। কর্তৃপক্ষ শুরুতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, তা থেকে অগ্রগতি ৫-৬ শতাংশ কম। পিলারের ওপর ইস্পাতের মূল কাঠামো স্থাপন কিছুটা পিছিয়ে গেছে। প্রকল্পের কাজের এই পর্যায়ে নদীর তলদেশের মাটির কিছু সমস্যার কারণে এমনটা হয়েছে। প্রকল্পের নথি ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসেই পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে দুটি পিলারের মধ্যে একটি ইস্পাতের কাঠামো (স্প্যান) বসানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। নকশা অনুসারে ইস্পাতের এই কাঠামোর ভেতর দিয়েই হবে রেলপথ। আর ওপর দিয়ে থাকবে যানবাহন চলাচলের পথ।
এখন কাঠামো বসানোর কাজ জুলাইয়ে শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো প্রথমে বসানো হবে দক্ষিণ প্রান্তে। ফলে জাজিরার দিক থেকে সেতু প্রথম দৃশ্যমান হবে।
সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার পর একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে সেতু বিভাগ। সেই পরিকল্পনায় চার বছরে অর্থাৎ ২০১৮ সালের নভেম্বরের মধ্যে মূল সেতু ও নদীশাসনের কাজ শেষ করার কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা একাধিকবার জানিয়েছেন।
গত এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি-সংক্রান্ত প্রতিবেদন বলছে, মূল সেতু ৩৭ শতাংশ ও নদীশাসনের কাজ ৩০ শতাংশ এগিয়েছে। এর বাইরে দুই পারের সংযোগ সড়ক, টোল প্লাজা, সহায়ক অবকাঠামো, পুনর্বাসনের কাজ প্রায় শেষ। সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজ ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে সেতুটি চালু করতে হলে আগামী প্রায় দেড় বছরে আরও ৫৮.৫ শতাংশ কাজ করতে হবে।
সেতু বিভাগের দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার নির্বাচনের আগেই সেতুটি চালু করতে চায়। সবাই সর্বাত্মক চেষ্টাও করছে। কিন্তু পদ্মা নদীর গঠন এবং এর আচরণ নানা অনিশ্চয়তায় ভরা। ফলে মূল সেতু ও নদীশাসনের কাজ বেশ জটিল। প্রতি পদে পদে চ্যালেঞ্জ আসছে। এরপরও সময়মতো কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী তাঁরা।
মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। দুই পাড়ের ডাঙার অংশ ধরলে দৈর্ঘ্য হবে ৯ কিলোমিটারের বেশি।
তিন দফা সংশোধনের পর পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। সাধারণত তিনবারের বেশি প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের সুযোগ নেই। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রয়োজন হলে আরও সংশোধনের সুযোগ রাখা হয়েছে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে এখন প্রায় তিন হাজার লোক কাজ করছে। তবে কর্মীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ে-কমে। শুকনো মৌসুমে বেশি লোক কাজ করে। আবার বর্ষায় কিছুটা কমে যায়। কর্মরত মানুষের মধ্যে আট শতাধিক বিদেশি, যাঁদের বেশির ভাগই চীনের। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাপানসহ আরও অনেক দেশের নাগরিক আছেন। তাঁদের বেশির ভাগ পরামর্শক।
সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সেতু বিভাগের সচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিষয়গুলো পুরোই কারিগরি। তাই এই বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক কথা বলবেন। প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামের কাছে গেলে তিনি বলেন, তাঁর কথা বলার অনুমতি নেই।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন