‘পদ্মাসেতু বাংলাদেশের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টিভঙ্গী বদলে দিয়েছে’

নিজস্ব অর্থায়নে মেগা প্রকল্প পদ্মাসেতু নির্মাণের ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বাবাসীর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘যারা বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন তারা দেখবেন, আমরা পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করায় বিশ্ববাসী এখন বাংলাদেশকে ভিন্নচোখে দেখতে শুরু করেছে।’ খবর বাসসের।

রবিবার সন্ধ্যায় কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে এক নৈশভোজে একথা বলেন তিনি। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং বর্তমানে কম্বোডিয়ার অ্যাক্রিডেটেড সাইদা মুনা তাসনিম প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে এই নৈশভোজের আয়োজন করেন। নৈশভোজে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও অংশ নেন।

দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন আটকানোয় অনিশ্চয়তায় পড়েছিল পদ্মা সেতু। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘদিন টানাপড়েনের পর তাদের না করে দেয় সরকার। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ শুরু করে সরকার।

পদ্মাসেতুর কথা টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা বাস্তব যে, সকলেই এখন বাংলাদেশ সম্পর্কে সমীহ করে কথা বলেন। বিজয়ী জাতি হিসেবে বাংলাদেশ সবসময় মাথা উঁচু করে চলবে।’

‘পদ্মাসেতু নির্মাণটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ এবং অনেকেরই এমন ধারণা ছিল বিশ্বব্যাংকের সাহায্য ছাড়া আমরা এটা নির্মাণ করতে পারবো না। কিন্তু আমি বলেছি আমরা পারবো এবং আমরা করে দেখাবো। আমরা মিথ্যা অভিযোগ কেন মাথা পেতে নেব। এটা সত্য যে এরফলে আমাদের অনেক সমস্যা পোহাতে হয়েছে তা স্বত্বেও আমরা চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছি।’

পদ্মাসেতুর মত মেগা প্রজেক্টও বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব সামগ্রী- বিশেষকরে আমাদের সিমেন্ট এবং স্টীল দিয়ে ব্রীজটি নির্মাণ করছি।’

বক্তব্যে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার সংগ্রামের সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করে দুই দেশের যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, “এই কম্বোডিয়ার কিন্ত অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের দেশটা কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছে। এদেশের মানুষের যে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, সংগ্রাম সব কিছুর সঙ্গে আমাদের বাঙালিদের যেন একটা মিল রয়ে গেছে। বর্তমানে কম্বোডিয়ান প্রধানমন্ত্রীও অনেক যন্ত্রণা এবং সংকটের মধ্যদিয়ে সময় অতিবাহিত করেছেন।

কম্বোডিয়া পৌঁছার পরও তিনি বাংলাদেশেই রয়েছেন এমন অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি খুব সুন্দর দেশ। আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করতে হবে।

দুই দেশের কূটনীতিকে আরো জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কাজকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য দক্ষিণ এবং দক্ষিণ, দক্ষিণ- পূর্ব এবং ইউরো-এশিয়ার দেশগুলি বিশেষ করে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে বিস্তার ঘটাতে পারি সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যাতে এই দেশকে আর কারো মুখাপেক্ষী হতে না হয়। তিনি বলেন, তাঁর সরকারের মূল লক্ষ্যই হলো দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উত্তোরণ ঘটানো, দারিদ্র বিমোচন, মানুষকে উন্নত জীবন দেয়া এবং গ্রামীন জনতার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো।

এ সময় তিনি দেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি দেশের রপ্তানি জোরদার করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন এবং বিদেশিদের সরাসরি বিনিয়োগের জন্য তাঁর সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধাগুলোও তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো তাদের ওয়ার্ল্ড মেমোরি রেজিষ্টারে অর্ন্তভূক্ত করায় জাতি হিসেবেও আমরা সম্মানিত হয়েছি বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং আশপাশের দেশে বসবাসকারি বাংলাদেশি শিল্পীরা অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং কবিতা আবৃত্তি করেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বেসমরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের আমন্ত্রণে গতকাল দেশটিতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন দিনের সফর শেষে আগামী ৫ ডিসেম্বর বিকালে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।