পরিকল্পিত হত্যা না-কি আত্মহত্যা?, নওরীনের মৃত্যুতে নানা ধোঁয়াশা!

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নওরীন নুসরাত স্নিগ্ধা’র রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে তার বর্ষের শিক্ষার্থীদের ব্যাচ বন্ধন-৩২।

শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের “মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব” ম্যুরাল চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় ।

মানববন্ধনে তার বিভাগের শিক্ষক ও বর্ষের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ রহস্যজনক মৃত্যুর বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে ধরেন। এটা হত্যা, আত্মহত্যা নাকি আত্মহত্যার প্ররোচনা সেটা তদন্ত করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা বলেন, নওরীনকে তার শুশুরবাড়ির লোকজন পরীক্ষা দিতে দেয় নি এবং তাকে পড়াশোনার ইতি টানতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিল, সেটা নওরীন মেনে নেয় নি। যদি নওরীনকে তালা দিয়ে বদ্ধ রাখা হতো, তাহলে সে কিভাবে ছাদে যায়? লাশ দেখে তার পিতা চমকে উঠলেন কারণ তার চুলগুলো এলোমেলোভাবে কাঁটা ছিল। তার মৃত্যুর আগে তাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে এটা তার ইঙ্গিত নয় কি? ছয়তলা থেকে পড়লে তো তার শরীর থেথলে যাওয়ার কথা, আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা কিন্তু এমন কোন চিহ্ন দেখা যায় নি! ছাদ থেকে পড়লো অথচ একটা মানুষও দেখলো না! তারা বলল সে পাগল ছিল। সে যদি পাগল হয় তাহলে কিভাবে লেখনীতে , বিতর্কে সহ প্রতিটি জায়গায় সে সেরা হয়? এসব কিছু এটা আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা তা নিয়ে অনেক ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে।

এসময় তার বর্ষের শিক্ষার্থীরা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হোক, আমার বোন হত্যার বিচার চাই, ছাদ থেকে পড়ে গেলো, নাকি ফেলে দিলো? বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই, আমার মৃত্যুর আগে অন্তত আমার মেয়ে হত্যার বিচার হোক, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?, আমার বন্ধু হত্যার বিচার চাই, তার পরিবারকে আইনি সুরক্ষা প্রদান করা হোক, আত্মহত্যা নাকি হত্যা? ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত চাই, আমার ক্যাম্পাসের সম্পদ ফেরত চাই, আমিও একজন নারী আমি ভয়ে আছিসহ‘ নানা স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, বিভাগটির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক সাহিদা আখতার, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুখলেসুর রহমান সুইটসহ তার বর্ষের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক সাহিদা আখতার বলেন, আমরা ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছি, তবে আমরা লক্ষ্য করছি ফলাফল শূন্যের কোটায়। ইতোমধ্যে নওরীনের পরিবার পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করছে, তবে পুলিশ মামলা নিয়ে গড়িমসি করছে। পৃথকভাবে মামলা করলে, তা নিয়েও তারা গড়িমসি করছে। নওরীন যে কক্ষে অবস্থান করতো, সেই কক্ষটিকে পুলিশের উচিত ছিল ঘটনার পরপরই চিলগালা মারা। তবে আমরা লক্ষ্য করছি পুলিশ এখনও চিলগালা মারে নি। সেই কক্ষে অনেক আলামত পাওয়া যেতো। চিলগালা না মারায় তারা হয়তো তা সরিয়ে ফেলছে।

তিনি বলেন, যদি নওরীন সত্যিই ছয়তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করতো, তাহলে তার মৃতদেহে কোথাও কাটা-ছেঁড়া নেই কেন?। এরকম হলে তো তার শরীর থেঁথলে যাওয়ার কথা,রক্ত বের হওয়ার কথা। সে যে ছয়তলা থেকে লাফ দিছে এগুলো শোনা কথা।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত নওরীন এখানকার রানিং শিক্ষার্থী হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা। সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা নওরীনের পাশে থাকবো।

শাপলা ফোরামের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন,কয়েকদিন আগেও আমরা একটি মানববন্ধন করেছি। এই রকম একটি প্রতিবাদী মেয়ে চলে গেছে, কিভাবে চলে গেছে তা আমাদের কাছে এখনও অস্পষ্ট। আমরা মানববন্ধনে কারো অন্যায়ভাবে বিচার করা হোক এটা চাচ্ছি না, তবে আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। আমি মনে করি, নওরীনের পরিবার কর্তৃক মামলা পুলিশ প্রশাসের উর্ধ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পোঁচাই নি, তাহলে পুলিশ গড়িমসি করতো না। আর শুশুরবাড়ির বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আছে, এ অভিযোগুলো পুলিশ প্রশাসনকে পাঠাতে হবে। তাহলে অবশ্যই পুলিশ মামলা নিবে।

তিনি আরো বলেন, তার স্বামী তাকে তালা বদ্ধ করে রাখছে, তাহলে কিভাবে সে ছাদ থেকে লাফ দিলো? যদিও ভবনের গার্ড আগে বলছে, নওরীন লাফ দিছে! তবে তার পরিবার গার্ডের কথা পর সে বলছে, আমি লাফ দিতে দেখি নি। এসব অনেক প্রশ্নের জন্ম দে। মৃত্যুর আগে শুশুড় বাড়ি থেকে তাকে পরীক্ষা দিতে আসতে দিচ্ছিল না, এটা মানবধিকার লঙ্গন। পুলিশের কাছে দাবি রাখি, সেইদিন কি হয়েছিল? সেটার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।