‘পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিটেই প্রশ্ন চলে যায় বাইরে’

বিসিএস মেডিকেল ও ব্যাংক পরীক্ষাসহ সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইস ব্যবহার করছে জালিয়াত চক্র। পরীক্ষার দিনে তারা চুক্তিবদ্ধদের ডিভাইস সরবরাহ করে। পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যে ওই ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বাইরে ফাঁস করে দেয়া হয়। এরপর বাইরে থাকা প্রশ্ন এক্সপার্টদের মাধ্যমে ডিভাইসের সঙ্গে সংযুক্ত কানে লাগানো ক্ষুদে হেডফোনে এমসিকিউ বৃত্ত ভরাট করেন চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীরা।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন।

ডিবির (উত্তর বিভাগ) এডিসি গোলাম সাকলাইন সিথিল জাগো নিউজকে জানান, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক, সরকারি চাকরি এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত এক প্রভাবশালী চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

শুক্রবার রাতে রাজধানীর মিরপুর, নিউমার্কেট ও ফার্মগেট এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ক্ষুদে ব্যাটারি, ইয়ারফোন, মোবাইলফোনের ন্যায় কথা বলার সিমযুক্ত মাস্টারকার্ড জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিনিজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তারা হলেন, সোনালী ব্যাংকের আইটি অফিসার অসিম কুমার দাস, পুবালী ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার মো. মনিরুল ইসলাম ওরফে সুমন এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার মো. সোহেল আকন্দ।

গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন, মো. জহিরুল ইসলাম, সাদ্দাতুর রহমান ওরফে সোহান, নাদিমুল ইসলাম, মো. এনামুলহক ওরফে শিশির, শেখ তারিকুজ্জামান, অর্নব চক্রবর্তী ও আরিফুর রহমান ওরফে শাহিন।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল বাতেন বলেন, জনৈক পুলকেশ দাস ওরফে বাচ্চু এই চক্রের মূল হোতা। তার বিশ্বস্ত সহযোগী জনৈক কার্জন। কার্জন পরীক্ষায় জালিয়াতির জন্য বিশেষ ডিভাইসগুলো সরবরাহ করে।

আব্দুল বাতেন বলেন, চক্রের সদস্যরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে তিন কাজ করে থাকে। কয়েকজন পরীক্ষায় পাশ করানোর জন্য মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হতে আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

তিনি বলেন, চক্রের আরেক অংশ পরীক্ষা শুরুর পর কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার জন্য ডিভাইস ব্যবহার ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আরেকটি অংশ ডিভাইস সরবরাহে সহযোগিতা করে।

তিনি আরও বলেন, কল রিসিভ করা গেলেও ওই ডিভাইসে কল করা যায় না। তবে ডিভাইসে ইনকামিং কল অটো রিসিভ হয়। ওপার থেকে উত্তর শুনে সেট কোড মিলিয়ে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়।

আব্দুল বাতেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারি পরিচালক আবু জাফর মজুমদার রুবেল, পুলকেশ ও কার্জন নামে তিনজন এই চক্রের মূল হোতা। তারা পলাতক রয়েছে তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে এ ব্যাপারে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।