পর্তুগালে হিজাব বিদ্বেষের শিকার বাংলাদেশি নারী
এবার পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার মাতৃম-মুনিজ পার্কে হিজাব পরায় বিদ্বেষপূর্ণ ও হিংসাত্মক কটাক্ষের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশি এক গৃহবধূ।
স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেলে তিনি বাচ্ছাদের খেলাধুলার জন্য ওই পার্কে নিয়ে যান। তখন সেখানে ইসলাম ও হিজাব বিদ্বেষী ষাটোর্ধ এক ব্যাক্তি এসে তাকে হিজাব খুলে ফেলতে বলেন নইলে নিজের দেশে ফিরে যেতে বলেন। সেই মুহূর্তে মার্তৃম-মুনিজ পার্কে এই প্রতিবেদক উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘক্ষণ ধরে লোকটিকে কটাক্ষ করতে দেখে এই প্রতিবেদক সেখানে এগিয়ে গেলে বাংলাদেশি ওই গৃহবধূ তাকে কটাক্ষের বিষয়টি জানান।
লোকটি তখনও বলছিলেন, “Take off your hijab or go back to your country”.
এই প্রতিবেদক লোকটির কাছে যানতে চান- কেনো সে রেসিস্টের মতো আচরণ করছে? হিজাব পরাটা তার অধিকার, তার পছন্দ।
তখন লোকটি বলতে শুরু করলো ‘এখানে এসব চলবে না, হিজাব খুলে চলতে হবে না হয় তার নিজের দেশে ফিরে যাক’।
এ সময় পর্তুগিজ এক তরুণীও প্রতিবাদ জানান। তিনি লোকটিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘হিজাব তার সংস্কৃতি, তার পছন্দ। এটা নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। এটা ইউরোপ ও পর্তুগালের চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তুমি এভাবে বলতে পারো না। তোমার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।’
প্রতিবেদকের ভাষ্য, এ ঘটনায় ওই পর্তুগিজ তরুণীসহ আমরা গেলাম পুলিশ স্টেশনে পুলিশ জানায়- এটা নাকি সে লোকের কথা বলার অধিকার! এটা নিয়ে তাদের কিছু করার নেই। পুলিশের এমন কথা শুনে আমি আর পর্তুগিজ মেয়েটি খানিকটা বিব্রত হই।
পরে মাথায় আসলো পরামর্শের ব্যপারটি! বাংলাদেশি রানা তাসলিম উদ্দিন ভাইকে ফোন করলাম তিনি মার্তৃম-মুনিজ পার্ক এলাকার মিউনিসিপালিটি (সান্তা মারিয়া মাইওর) কাউন্সিলর। রানা ভাইকে পুরো ব্যাপারটি জানালাম। তিনি পার্ক এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য কাউন্সিল চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।
রাতে পর্তুগালের ইমিগ্রেশন হাইকমিশনারকে পুরো ব্যপারটি জানালে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বাংলাদেশি সেই বোনটির জন্য সমবেদনা জানান, তাকে যেনো আমি বলে দিই এটার বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সম-অধিকার আর ডিসক্রিমিনেশনের প্রশ্নে কোনো আপোষ নেই। আর এসবের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর আইন রয়েছে।
তিনি আমাকে বেশ কিছু স্টেপ বললেন।
এই প্রতিবেদকের মতে, জাতি হিসেবে পর্তুগিজরা অনেক বন্ধুত্বসুলভ। আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতায় কাউকে এমন দেখিনি। যেটা ঘটেছে সেটা অপ্রত্যাশিত, তবে ব্রিটেন আর ইউরোপজুড়ে হিজাব আর মুসলিম বিদ্বেষ যে হারে ছড়াচ্ছে এসব এখন আর এক জায়গার সমস্যা না, বৈশ্বিক সমস্যা বলা যায়।
দুদিন আগে ১০ বছরের কম বয়সী মেয়েদের স্কুলে মাথায় স্কার্ফ পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রস্তাব করেছে অস্ট্রিয়ার নতুন জোট সরকার। অস্ট্রিয়ার শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, হিজাব বিষয়ে নতুন প্রস্তাবিত এই আইন সামনের গ্রীষ্মেই কার্যকর করা হবে।
বিবিসি রিপোর্টে বলেছে, ২০১৫ সাল থেকে ব্রিটেনে মুসলমানদের লক্ষ্য করে হামলা, অপদস্তের ঘটনা ৩২৬ শতাংশ বেড়েছে। টার্গেট হচ্ছে মূলত হিজাব-বোরকা পরা মুসলিমরা।
বেশকিছু আগে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসে হিজাবে মুখ ঢাকা থাকায় স্কুল বাস থেকে নামিয়ে দেয়া হয় এক ছাত্রীকে।
চলতি বছরের শুরুতে রুমাল বা স্কার্ফ পরার কারণে ইতালির একজন মুসলিম নারী আইনজীবীকে আদালত থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল।
এতসব ঘটনার পরে বিশ্বজুড়ে হিজাব বিদ্বেষের মাত্রা যে কোন পর্যায়ে রয়েছে সেটা অনুমান করা দুষ্কর নয়! এই ঘৃণার যাত্রার গন্তব্য কোথাই? অধিকার পরে চাইবো হিজাব পরিহিতাদের নিরাপত্তাটুকু নিশ্চিত করবে কে?
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন