অনিয়মেই যেন নিয়ম
পল্লীবিদ্যুতের ইলেকট্রিশিয়ানের দৌরাত্বে চরম ভোগান্তির শিকার গ্রাহক
হামিদা আক্তার, নীলফামারী : পল্লী বিদ্যুতে অনিয়মেই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ঘরে কিংবা বাড়ীতে পল্লী বিদ্যুৎ নিতে হলে গুনতে হয় কয়েক দফায় টাকা। আর এ টাকা কোথায় যায় কিভাবে যায় তা গ্রাহকেরা বুঝতে পারলেও যেন না বুঝার ভান করেই দফায় দফায় অর্থ গুনে দেন পল্লী বিদ্যুতের নিয়োজিত ইলেকট্রিশিয়ান কিংবা দালালদের দের হাতে। বিদ্যুৎ সংযোগের কথা বলে গ্রাহক প্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েও অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর। তাও আবার কোথাও পাওয়া যায়। কোথাও পাওয়া যায় না। একটি লট পেতে গুনে দিতে হয় লাখ লাখ টাকা। কথাগুলি বলছিলেন নীলফামারীর বালাপাড়া ইউনিয়নের ছাতনাই বালাপাড়া গ্রামের জহির উদ্দিনের পুত্র মাজেদুল ইসলাম। চরম ভোগান্তির শিকার মাজেদুল জানান, গেল বছর আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে মর্মে বাড়ী প্রতি ৭ হাজার টাকা কন্টাকে ৫৫টি বাড়ীর জন্য ইলেকট্রিশিয়ান সহিদুল ইসলামের কাছে আমি ৩৮ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছি। কথা হয় এ প্লটে পিলার বসানো হলেই ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকার মধ্যে বাকী ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু টাকা নেওয়ার প্রায় ১ বছর পরে টাকা হাতিয়ে নেওয়া সহিদুলকে বাদ দিয়ে আমরা অন্য আরেক জনের মাধ্যমে কাজ করার কারনে এবার কয়েক দিন হলো এ প্লটে পিলার ফেলানো হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের ইলেকট্রিশিয়ান সহিদুল কি বলে টাকা নেয় ? প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় নারী নেত্রী ও উপজেলা তাতী লীগের সভাপতি জাহানারা বেগম বলেন, পল্লীবিদ্যুৎ গ্রাহককে মারে তিলে তিলে। প্রথমে স্টিমিট করার সময় ইঞ্জিনিয়ারকে বাড়ী প্রতি দিতে হয় ৫’শ, দ্বিতীয় ধাপে লাইন ম্যানকে ৩’শ , তৃতীয় ধাপে ওয়ারিং ম্যান/ইলেকট্রিশিয়ানকে ৩ থেকে ৫’শ এবং সবশেষে ঠিকাদারকে দিতে হয় ৫ থেকে ৭’শ টাকা। ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা এভাবে আর বাকীর সাড়ে ৩ হাজার টাকার মিটার বাড়ীর ওয়ারিং বাবদ ব্যয় করে সেখান থেকে আরো ৫’শ টাকা বাঁচিয়ে ঐ টাকা দালালি খরচ দিতে হয় অর্থাৎ যারা দৌঁড়ঝাপ করে বিদ্যুতের লটগুলি পাশ করিয়ে আনেন তাদের জন্য। বিভিন্ন প্রশ্নের ফাঁকে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানান পল্লী বিদ্যুতের এসব অনিয়ম কিনা জানি তবে জানি এটাই নিয়ম। এভাবেই বিদ্যুৎ পেতে হয়। শুধু তাই নয় সরজমিনে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ইলেকট্রিশান সহিদুল ইসলাম ও আশরাফুল ইসলাম এভাবে অগ্রিম টাকা নিয়ে তারা এখন কোটিপতি বনে গেছেন। হাজার হাজার মানুষ বিদ্যুতের জন্য এভাবে টাকা দিয়ে এখনও তারা পায়নি বিদ্যুৎ। আর বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে ইলেকট্রিশিয়ান সহিদুল ইসলাম বলে জানান মাজেদুল ইসলাম। এ কারনে সহিদূল এখন পশ্চিম ছাতনাই, পূর্বছাতনাই ও বালাপাড়ায় আসেন না। সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে গত ১৪ মে’১৮ উত্তর দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহক সোবহান আলী হিসাব নং- ১৮৩/৭৭৪০ এর পক্ষে গ্রাহকের হাফিজার রহমান উক্ত ইলেকট্রিশিয়ান সহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভুঁয়া মিটার লাগানো ও মিটার লাগিয়ে দেওযার কথা বলে ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া অভিযোহ দাখিল করেছে চেয়ারম্যান ,বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোডর্, জিএম, নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ ও ডিজিএম, ডোমার জোনাল অফিসে। অভিযোগ পত্রে হাফিজার রহমান বলেন, সুবহান আলী মিটারটি লুজ কানেকশনে ফায়ারিং হলে ইলেকট্রিশিয়ান সহিদুল স্থানীয় ডাঙ্গারহাট বাজারে বিদ্যুতের যন্ত্রাংশ বিক্রেতা শামিমকে দিয়ে মিটারের সিল কেটে লুজ কানেকশন ঠিক করে দেন। এ সময় তিনি ১ হাজার টাকা নেন। কয়েকদিনে পরেই মিটারটি পুড়ে যাওয়া আবারও সেখানে সহিদুল ও শামিম গিয়ে ১০ হাজার চান নতুন মিটার লাগিয়ে দিবেন। তাদের কথামত ৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি নতুন মিটার বসিয়ে নেন। কিন্তু সিকিউরিটি সিল ছাড়া ঐ মিটার বসানো হলে স্থানীয়রা বলেন এটা অফিসের মিটার নয় ভুঁয়া মিটার লাগিয়ে দিয়েছে ইলেকট্রিশিয়ান সহিদুল। পরবর্তীতে সহিদুল ইসলাম ঐ মিটার খুলে এনে রেখে দিয়ে হাফিজারে কাছে ৩৫ হাজার টাকা চান নতুন মিটার লাগানোর কথা বলে। হাফিজার রহমান বলেন, আমি টাকা না দিয়ে এর প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেন বরাবরে অভিযোগ করি। আমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এজিএম সরজমিসে পরিদর্শন করে গেছেন। কিন্তু আমার মিটারের কোন সমাধান এখনও হয়নি। এভাবেই ইলেকট্রিশিয়ান সহিদুল ইসলাম বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করছেন গ্রাহকদের বলে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে রয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন