পহেলা ডিসেম্বর পাবনার নাজিরপুর গণহত্যা দিবস
পহেলা ডিসেম্বর পাবনার নাজিরপুর গণহত্যা দিবস। একাত্তরের এইদিনে নাজিরপুর গ্রামে পাক-হানাদার বাহিনী তাদের দোসরদের নিয়ে চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় অসংখ্য বাড়িঘর। পাবনা শহরের অদূরে হেমায়েতপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় গ্রামটি নাজিরপুর। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই গ্রামটি ছিলো জেলার পশ্চিমাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের মূল ঘাটি। এখান থেকেই পরিচালিত হতো পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলার রণকৌশল।
পাকবাহিনীর কাছেও আতংকের নাম ছিল নাজিরপুর।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা নভেম্বরে নাজিরপুর ও এর আশপাশের গ্রামগুলোতে অবস্থান নিতে থাকে। তাদের গেরিলা আক্রমণে কয়েকজন হানাদার বাহিনীর সদস্য নিহত হয়। এ অবস্থায় আতংকিত হয়ে পরে হানাদার বাহিনী। তাই চরমপন্থিরা পাশ্ববর্তী চর শানিরদিয়ার, তিনগাছা বাগান, শ্রীকৃষ্ণপুরসহ আশপাশে ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্প থেকে তারা দলবল নিয়ে ঘরে ঘরে অনুপ্রবেশ করে সন্দেহজনকভাবে তরুণ-যুবকদের ধরে নিয়ে যায়। তাদের হত্যা করে। হানাদারের দোসরেরা হামলা চালায়। এ যুদ্ধে মাস্টার শাহেদ ও আফতাব নামের দুই মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা ২৭ নভেম্বর কৃষ্ণপুর ও ১০ নভেম্বর তিনগাছা ক্যাম্পে গেরিলা হামলা চালিয়ে তাদের অবস্থান লন্ডভন্ড করে দেয়। এ হামলায় মহরম ও ছানা শহীদ হন। চরমপন্থিরা সবাই নিহত হন। এ দুটি হামলার প্রতিশোধ নিতেই নাজিরপুরে গণহত্যা চালানো হয়। ৬২ জনকে ধরে নিয়ে গিয়ে দুটি খালে নৃশংসভাবে হত্যা করে তারা। আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় প্রায় দুই শতাধিক বাড়িঘর। সেদিনের কথা মনে করে আজও শিউরে ওঠেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বজন হারানো মানুষগুলো।
নাজিরগ্রামে যার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল সেই নজরুল ইসলাম হাবুর স্মরণে নির্মিত হয়েছে নজরুল ইসলাম হাব স্কুল এন্ড কলেজ।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, হামলাকারীরা তল্লাশী চালিয়ে ধরে শিশু, তরুণ, যুবক ও বৃদ্ধদের। মধ্য গ্রামে বাড়ি ঘিরে আহম্মদ, ছোরাব, হিরাই ও ছলিম এই চার ভাইকে বন্দি করে। তাদের একটি ঘরে আটকিয়ে ঘরে আগুন দেয়। তারা অগ্নিদগ্ধ হয়ে শহীদ হন। ঘরবাড়িতে লুটতরাজ চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। ধর্ষণকামীরা নেমে পড়ে পাশবিক নির্যাতনে। আটককৃতদের প্রাক সকালে পাবনা-পাকশী সড়কের উত্তর পাশে দুটি খালে জড়ো করে। হাত ও চোখ বাধা অবস্থায় তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আরো জানায়, পহেলা ডিসেম্বর ভোরে পাক বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরদের নিয়ে চারদিক থেকে নাজিরপুর গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ সহ ৬২ জনকে গুলি করে হত্যা করে। রক্তের বন্যা বইয়ে যায় এ গ্রামে। অথচ সেই শহীদ পরিবারগুলোর আজ কেউ খোঁজ নেয়না। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ প্রতি পরিবারকে কবর বাঁধানোর জন্য দুই হাজার করে টাকা দিয়েছিলেন। এরপর আর কেউ খোঁজ নেয়নি। গণকবর বা বধ্যভূমি চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করা হয়নি। অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে সেগুলো। প্রতি বছর অনেকটা নিরবে কেটে যায় নাজিরপুর গণহত্যা দিবস।
নাজিরপুরে গ্রামে শহীদদের কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেবে সরকার-এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন